দেশ স্বাধীন হলেও থামেনি তার জীবন যুদ্ধ!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: বাইসাইকেলে ফেরি করে বেড়ান লালমনিরহাটের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় (৬৮)। সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের কাজীরচওড়া গ্রামের বাসিন্দা ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন ফেরিওয়ালা হয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুড়ে মসলা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মৃত তাড়িনীকান্ত রায়ের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় ও তার অসুস্থ স্ত্রী বিমালা রানীকে (৫৮) নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে একটি একচালা টিনের ঘরে বসবাস করছেন। তার ঘরটি মেরামত করার সামর্থও নেই। মসলা বিক্রি করে যা আয় করেন তার অর্ধেক চলে যাচ্ছে অসুস্থ্য স্ত্রীর চিকিৎসা খরচে। ওই মুক্তিযোদ্ধা বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও দু’মুঠো ভাতের জন্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বাইসাইকেল চালিয়ে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে মসলা বিক্রি করছেন।
এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ’১৮ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। যুদ্ধ করেছি। মাতৃভমিকে শত্রুমুক্ত করেছি। যুদ্ধ থেমে গেলো, দেশ স্বাধীন হলো, কিন্তু আমার জীবন যুদ্ধ এখনো থামেনি। স্বাধীনতার ৫০বছর পরেও প্রতিটি মুহুর্ত আমি সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি’।
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি জানান, জীবনের শেষ বয়সে এসেও প্রতিদিন সকালে বাইসাইকেল চড়ে বাড়ি বাড়ি মসলা বিক্রি শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেন। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই জোটে খাবার আর চলে অসুস্থ্য স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ’। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার সকল ধরনের কাগজপত্র রয়েছে। আমি যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছি, কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৫০বছর পেরিয়ে গেলেও আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি’।
জানাগেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র একজন সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তার নাম রয়েছে সরকারি তালিকায়। যার ক্রমিক নাম্বার ২০৫৯৪৪, কিন্তু তিনি পাচ্ছেন না সরকারি সুযোগ সুবিধা। তার এই ক্রমিক নাম্বারটি ব্যবহার করে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার অপর একজন প্রতাপ চন্দ্র দীর্ঘদিন থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মুক্তিযোদ্ধা যাছাইবাছাই কমিটির মাধ্যমে মসলা বিক্রেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায়ের কাগজপত্র যাছাইবাছাই হয়ে চুড়ান্ত করা হয়। কিন্তু আজও ওই যাছাইবাছাইয়ের ফলাফল পাননি তিনি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, মসলা বিক্রেতা মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায়ের সকল কাগজপত্র যাছাইবাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে এবং শিঘ্রই এর ফলাফল চলে আসবে।
আর ’রংপুরে গঙ্গাচড়া এলাকার অপর প্রতাপ চন্দ্রের সরকারি ভাতা বন্ধ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতাপ চন্দ্র সকল ধরনের সরকারি সুযোগসুবিধা পাবেন। বিধি মোতাবেক সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলেও তিনি জানান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.