দেশে বেকারত্বের হার এবং বাস্তব পরিস্থিতি

ফিরোজ কবির: আয়তনে ছোট কিন্তু জনসংখ্যায় টইটম্বুর বাংলাদেশ। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে এই উন্নয়নশীল দেশে প্রকট আকারে প্রধান সমস্যা হতে চলছে বেকারত্ব।

“লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে সে”- প্রবাদটির বাস্তবতা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। দিন দিন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়ছে না চাকরির বাজার।

শৈশব থেকে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হলেও পূরণ হচ্ছে না সে স্বপ্ন। অনেক কষ্ট, সাধনা আর অনেক টাকা খরচের পর উচ্চশিক্ষা অর্জন করে বেকার হয়ে বসে থাকায় সে স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। কাজ না পেয়ে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিক্ষিত বেকার শ্রেণির সংখ্যা। এই মুহূর্তে একটা ভাল চাকরি পাওয়াই হল স্বপ্ন-প্রত্যাশা!

বেকার এই শব্দটার মধ্যে কত যে কষ্ট লুকিয়ে থাকে। বেকার ছাড়া কেউ বোঝে না। আমাদের দেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই ধারদেনা করে পড়াশুনা করে। কেউ সম্পদ বন্ধক বা বিক্রি করে পড়াশুনা শেষ করে। এরপর যদি চাকরি না পেয়ে বেকার জীবন কাটায় সেটা কতটা কষ্টকর ভুক্তভোগীই জানেন।

ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা চাকরি প্রার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা তাঁদের চাহিদামত কাজ পাচ্ছেন না ৷ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে ২০১০ সালে বেকার সংখ্যা ছিল ২০ লাখ, ২০১২ সালে ২৪ লাখ, ২০১৬ সালের দিকে ২৬ লাখ। বৃদ্ধির এই ধারার তথ্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় ২০২০ সালে বেকার সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি।

শিক্ষিতদের বেকার হওয়ার পিছনে কয়েকটি কারণ বিদ্যমান। সব থেকে বড় কারণ চাকরি নিরাপত্তা ও অন্যসব চাকরি থেকে সুবিধা বেশি বলে সরকারি চাকরির পিছনে ছোটা। সরকারি চাকরি যাকে আমরা সোনার হরিণ বলি।

বিশ্বের কোনো দেশই বেকারত্ব থেকে মুক্ত নয়। উন্নত বিশ্বেও বেকারত্ব রয়েছে। তবে তাদের বেকারত্ব আর আমাদের দেশের মতো উন্নয়নকামী দেশের বেকারত্বের ধরণ এক নয়। সেখানে সরকারিভাবে বেকারদের ভাতা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। যদিও সেসব দেশের বেকাররা এ ভাতা নেয়াকে অসম্মানজনক মনে করে।

আবার ইউরোপের বেশ কিছু দেশ আছে, যাদের জনশক্তি কম এবং কাজ করার মতো পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব রয়েছে। তারা অন্যদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করে। আমাদের দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব থাকলেও কর্মক্ষম বিপুল জনগোষ্ঠী রয়েছে। এদের বেশিরভাগই তরুণ। বলা যায়, তারুণ্যে ভরপুর একটি দেশ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তরুণ জনগোষ্ঠীর এ সুবিধা যদি কাজে লাগানো যায়, তবে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করবে।

করোনা দেশে বাড়তে থাকা এই বেকার সমস্যাকে বাড়িয়ে একদম ঘাড়ের ওপর বসিয়ে দিয়েছে। এখন থেকেই এই সমস্যা নিয়ে আলোকপাত না করলে করোনা পরবর্তী সময়ে অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। কোনো দেশের পক্ষেই বেকার সমস্যা একদম নিরসন করা সম্ভব নয়, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: ফিরোজ কবির, জুনিয়র অফিসার, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, উত্তরা ব্রাঞ্চ, ঢাকা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.