দেশে থাইরয়েড সমস্যায় পাঁচ কোটি মানুষ

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: প্রজাপতির ডানার মতো থাইরয়েড শরীরের একটি গ্রন্থি। যা গলার স্বরযন্ত্রের দু’পাশে থাকে। এ গ্রন্থির বাদামি রং। ঘাড়ের কাছে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসরিত হরমোন শরীরের মেটাবলিজমকে নিয়ন্ত্রণ ও শরীরের প্রতিটি কোষকে প্রভাবিত করে।  শরীরের শক্তি, পুষ্টি ও অক্সিজেন উৎপাদন করতে সহায়তা করে এই হরমোন। শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়এর ব্যতিক্রম হলেই ।
দেশে  অন্তত ৫ কোটি থাইরয়েড রোগী রয়েছে বর্তমানে। এর বেশিরভাগই নারী।  তিন কোটি রোগীই এদের মধ্যে জানে না তারা এ রোগে আক্রান্ত।  সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান সাধারণত একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) তথ্য মতে, দেশে হরমোনজনিত রোগী প্রায় ৫ কোটি, এরমধ্যে ৩ কোটি নারী। বিশ্বব্যাপী ৭৫ কোটি মানুষ এ রোগে ভুগছেন ।
২০০৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী থাইরয়েড দিবস পালিত হয়ে আসছে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে । থাইরয়েড সমস্যা হলে হৃদস্পন্দন হ্রাস পায়, ঠান্ডায় স্পর্শকাতরতা বাড়ে, হাতে অবশ অবশ অনুভূত হয়ে ঘাড়ের পরিবর্ধন শুরু হয়। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য, মেয়েদের মাসিকে প্রচুর রক্তপাত হয় এবং চুল ও ত্বকে শুষ্কতা দেখা দেয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন সম্প্রতি করা এক গবেষণার বরাত দিয়ে বলেন, বাজারে থাকা ১০ ব্র্যান্ডের লবণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে আয়োডিনের মাত্রা ঠিক নেই। লবণের এই মাত্রা ঠিক করা অতি জরুরি। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে সমস্যা হলে মৃদু থেকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, ঘাড় নড়াচড়া করলে অথবা কোনো কিছু গিলে খেতে গেলে অস্বস্তি অথবা ব্যথা হয়ে থাকে। সর্দি (ফ্লু), হাম অথবা মাম্পসের মতো ভাইরাসজনিত রোগের সময় এ রোগটি দৃশ্যমান হয় বেশি।
দেশে ৬টি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে তিনি বলেন। এই মৌলিক অধিকার সাতটি উন্নত বিশ্বে। এরমধ্যে সপ্তমটি হচ্ছে থাইরয়েড হরমোন বিষয়ক তথ্য অধিকার।  বিশ্বের ১ নম্বর রোগ থাইরয়েডজনিত রোগ। জনসচেতনতাই মুখ্যএই রোগ প্রতিরোধ কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে । থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়া উভয়ই রোগের সৃষ্টি করে।
নারীদের অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা করে নেয়া উচিতবিয়ের আগে কিংবা গর্ভধারণের আগে । এ রোগের সম্ভাবনা থাকলে যথাযথ চিকিত্সা পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর গর্ভধারণ করা উচিত। নইলে বাচ্চাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর বলেন, প্রতিটি বাচ্চার জন্মগ্রহণের পর বাধ্যতামূলকভাবে থাইরয়েড পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।
কেননা বিকলাঙ্গ বাচ্চা আমাদের কারও কাম্য নয়। আর বাবার এ সমস্যা থাকলে কোনো ঝুঁকি নেই বরং মা’দের ক্ষেত্রে রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে শহরের ২০ থেকে ৩০ ভাগ গর্ভবতী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। আর গ্রামের পরিস্থিতির কোনো রেকর্ড নেই। তাই ধারণা করা যায়, সেখানকার অবস্থা আরও করুণ।
এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকায় । তবে এ হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, হঠাত্ করে শরীর মোটা ও চিকন হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা, চোখ ভয়ঙ্কর আকারে বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে।
এ রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে বলা হয়, সব বয়সের মানুষের স্ক্রিনিং, আয়োডিনের অভাব, ভেজাল খাদ্য ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করা এ রোগের প্রধান প্রতিরোধক। এছাড়া সরকার খুব সহজে থাইরয়েডের বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং চালু করতে পারে। পাশাপাশি বাজারের লবণগুলোর আয়োডিনের মান নিশ্চিত করতে পারে।
কোনো প্রয়োজন নেই দেশের বাইরে যাওয়ার এই রোগের চিকিত্সার জন্য  । দেশে আয়োডিনের ডোজ মাত্র ৩০০ টাকা আর সিঙ্গাপুরে এ খরচ ৫০ হাজার টাকা। আর অন্যান্য দেশে আরও বেশি। এদিকে এই রোগের পরীক্ষা করাতে দেশের সরকারি হাসপাতালে খরচ মাত্র ২৫০ টাকা আর বেসরকারিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এছাড়া দেশের সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালে হরমোন বিষয়ক চিকিৎসক রয়েছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.