দেশের সুন্দরতম গ্রাম, যেখানে নেই চোরের ভয়

বিশেষ প্রতিনিধি: বান্দরবান স্টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার হালিম ভাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখছি। বান্দরবানের সবুজ প্রকৃতি, উঁচু-নিচু পাহাড়, আঁকাবাকা পথ ও ভেসে থাকা মেঘ দেখতে প্রতিবছর সেখানে ছুটে চলেন লাখ লাখ ভ্রমণপিপাসুরা। বিশেষ করে শীত এলে বান্দরবানে পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কারণ পাহাড় ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হলো শীতকাল। এ সময় বান্দরবান ভ্রমণে গেলে অবশ্যই দেশের সুন্দরতম গ্রাম থেকে ঘুরে আসতে ভুলবেন না।
এটি ছবির মতো সুন্দর একটি ছোট্ট গ্রাম। যেন মনে হবে শিল্পী তার রং-তুলির টানে ছবি এঁকেছেন। সবুজের মাঝে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছোট ছোট ঘরবাড়ি, যা মুহূর্তেই আপনাকে নিয়ে যাবে কল্পনার রাজ্যে। বলছি বান্দরবানের রুমা উপজেলার মুনলাই পাড়ার কথা। উপর থেকে দেখলে ইংরেজির এম আকৃতির ছোট্ট একটি গ্রাম এটি।
বান্দরবান শহর থেকে মাত্র দুই-আড়াই ঘণ্টাতেই পৌঁছে যাওয়া যায় ৫৪ বম পরিবারের প্রশান্তময় এই পাহাড়ি গ্রামে। চারদিকে পাহাড় বেষ্টিত ও সাঙ্গু নদী বিধৌত এই পাড়া আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে ইকো সিস্টেমের হোম স্টে ও পাহাড়ি রান্না, রোমাঞ্চকর ট্রেকিং, কায়াকিং, দেশের দীর্ঘতম জিপ লাইন ও বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের প্রথম কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে এই পাহাড়ি বম সম্প্রদায়ের গ্রামে! মুনলাই পাড়াতে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার পাশাপাশি স্বাদ নিতে পারবেন বিভিন্ন রোমাঞ্চকর এক্টিভিটিজের। ট্রিটপ, কায়াকিং, জিপ লাইনিং, রাতের বেলা বারবিকিউ, ক্যাম্প ফায়ার ইত্যাদি এক্টিভিটিজ রয়েছে এই গ্রাম জুড়ে।
রুমা উপজেলা থেকে ৩ কিলোমিটারের ছোট-বড় পাহাড়ি পথ পেরিয়েই দেখা মিলবে মুনলাই পাড়ার। বগালেকে যাওয়ার পথেই পড়ে এই পাড়া। রাস্তার দুই ধার ঘেঁষা পাড়াটি। সত্যিই সে দৃশ্য অকল্পনীয়! অন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের বসতি বা পাড়ার তুলনায় মুনলাই পাড়া অনেকটা আলাদা।
এরই মধ্যে দেশের অন্যতম পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে। জানা যায়, এই গ্রামের বাসিন্দারা দৈনিক অন্তত ১০ মিনিট করে নিজ নিজ বাড়ির চারদিক এমনকি রাস্তাঘাটও পরিষ্কার করেন। সেখানে নেই কোনো বিলাসিতা। প্রতিটি বাড়িই নান্দনিক ও ছিমছাম।
কাঠের বাড়িগুলোতে অর্কিডসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো। বাড়ির সামনে কোনোটা ঝোলানো, কোনোটা আবার সামনের মাটিতে। রাস্তাগুলোতেও দু’একটা গাছের পাতা ছাড়া বিশেষ কোনো ময়লা-আবর্জনার দেখা নেই। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।
জানা যায়, ১৯৮৩ সালে স্থানীয় ৩০টি বম পরিবার সুনসংপাড়া থেকে এসে জনপ্রতি পাঁচ একর করে জায়গা নিয়ে মুনলাইপাড়ায় বসবাস শুরু করে। এখন ৫৪ পরিবার এই পাড়ায় বসবাস করছে। তারা সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করেন। ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় দেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামের তকমা পেয়েছে তাদের ছোট্ট মুনলাই পাড়া।
পুরো পাড়ার কোথাও আপনি ময়লা আবর্জনা পাবেন না। সেখানকার ডাস্টবিনগুলোও দেখার মতো। নিজেদের গ্রামকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে অনন্য সব উদ্যোগ নিয়েছে মুনলাইপাড়া কমিউনিটি ট্যুরিজম কো-ম্যানেজম্যান্ট কমিটি।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এ গ্রামের বাসিন্দারা কেউই ঘরে কখনো তালা লাগান না। কারণ সেখানে চুরি হওয়ার কোনো ভয়ই নেই। বাসিন্দারা একই পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজেদেরকে ভাবেন। এ কারণে ঘর খোলা রেখেই কেউ বাইরে গেলে তার প্রতিবেশি নিজের মনে করেই বাড়িটি পাহারা দেন। যা বর্তমান সময়ে দৃষ্টান্তমূলক।
মুনলাই পাড়া যাবেন কীভাবে?
ঢাকা থেকে প্রথমে বান্দরবান পৌঁছাতে হবে। চেষ্টা করবেন রাতে রওনা হতে। তাহলে সকালে বান্দরবান পৌঁছেই সেখান থেকে নাস্তা করে চান্দের গাড়ি করে মুনলাই পাড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করুন। রাস্তায় কোনো সমস্যা না হলে দুপুর ১২টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন মুনলাই পাড়াতে।
কোথায় থাকবেন?
মুনলাই পাড়াতে হোম স্টে বেইজড ইকো কটেজ আছে। থাকা-খাওয়া সব ওখানেই করতে পারবেন। পর্যাপ্ত ওয়াশরুম ও গোসলের ব্যবস্থা আছে। তাই সেখানে ভালোভাবেই দিন কাটাতে পারবেন।
দেখা ও লেখা বান্দরবান স্টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার হালিম ভাইয়ের ভালোবাসায়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.