দেশের সবখানে হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবার পরীক্ষা করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে দেশের সবখানে হোটেল-রেস্টুরেন্টের খাবার পরীক্ষা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাবারের মান পরীক্ষা করে যেভাবে গ্রেডিং স্টিকার দেওয়া হচ্ছে এবং নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে, সারা দেশেই সেই ব্যবস্থা চালু করতে বলেছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১ এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। পাশাপাশি অনলাইনে অর্ডার ভিত্তিক খাবারের মান নিশ্চিত করতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রান্তে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘এটা খুব ভালো যে রাজধানীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট-হোটেলে খাবারের মান পরীক্ষা করে গ্রেডিং স্টিকার দেওয়া হচ্ছে, মনিটরিং করা হচ্ছে। রাজধানীর পাশাপাশি পুরো দেশেই এটা হওয়া দরকার। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য যা সহযোগিতা করা দরকার করবো। এর জন্য টাকা লাগবে। অর্থমন্ত্রী আমার পাশে আছেন। সমস্যা নাই। তিনি এটা দেখবেন। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য যা প্রয়োজন সব করবো।’ 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকাল অনলাইনে অর্ডারের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় খাবার যাচ্ছে। ফুড সাপ্লাই হচ্ছে। এটা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা দেখা দরকার।’
খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুই পয়সা বেশী কামানোর জন্য এরা ভেজাল দিতেই থাকে। পচ-গন্ধ খাবার দিতে থাকে। খাবারের মানটা ঠিক রাখার খরচ যেটা পড়েছে সেই দামটা হয়তো রাখলো, সেই সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু ভেজাল যাতে দিতে না পারে সেটা নজরদারি করতে হবে। কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে খাদ্যের মান পরীক্ষার পাশাপাশি প্রত্যেক বিভাগে এবং গ্রাম পর্যায়েও ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রফতানী করতে হলে খাবারের মান বাড়ানো ও খাদ্য পরীক্ষার ওপর জোর দিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। খাবারের পাশাপাশি কৃষিজমির গুণাগুণ ও ফসলের মান পরীক্ষার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, ‘মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আমাদের যা যা করার প্রয়োজন সেটাই করবো। ১০০টা খাদ্য শিল্পে যে ফুড সেফ প্ল্যান বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটা সারা বাংলাদেশেই করা উচিত। ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে, একদম গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এটা নিয়ে যেতে হবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যত বাড়ছে, মানুষ যত বেশী কাজে ব্যস্ত হবে, তত বেশী এটার প্রয়োজনও হবে। কাজেই সেই গুণাগুণ পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কেন্দ্রীয় ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি হবে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয়ভাবে করা প্রয়োজন। কারণ আমরা ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরী করছি। সেখানে শিল্পায়ন হবে। এই শিল্পায়নে আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ আমাদের যে নদী-নালা খাল বিল রয়েছে, তাছাড়া এখানে মৎস্য পালনের সাথে পশু পালন অন্যান্য তরি-তরকারি-সবজি উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু আমরা যদি এটা বিদেশে রফতানী করতে চাই, তাহলে ল্যাবরেটরি টেস্টিং তার সার্টিফিকেট নেওয়া এটা একান্তভাবে অপরিহার্য।’
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, খাদ্য রফতানীর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। এক্ষত্রে ডাক বিভাগকে উন্নত করতে চাই। যেন তারা ভালোভাবে সেবা দিতে পারে। কেননা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করলে পরে সেটা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য নিরাপদ পরিবহনের জন্য আমাদের ডাক বিভাগ একটা ভালো ব্যবস্থা নিতে পারে।
দেশে অঞ্চল ভিত্তিক ফসল উৎপাদনের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব এলাকার মাটি পরীক্ষা পানি পরীক্ষার ব্যবস্থা যদিও আমাদের আছে, তারপরও সেদিকে আরকটু নজর দেওয়া দরকার। কোন জায়গায় কী ধরনের ফসল হতে পারে। সেটা প্রক্রিয়াজাত করে আমরা মার্কেটিংর ব্যবস্থা করতে পারি। আমাদের এক ইঞ্চি জমিও অনবাদী থাকবে না। সবাই নিজ নিজ পতিত জমিতে রেখে তা চাষাবাদ করুন। তাহলে আমাদের কখনও খাদ্যের অভাব হবে না। পর্যাপ্ত খাদ্য থাকার কারণেই করোনা ভাইরাস পরপর তিন-চার বার বন্যা আসল, তারপরে ঘুর্ণিঝড়; সব করেও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি, দেশে ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। এর আগের সরকারগুলো কখনও খাদ্যে সংসম্পূর্ণতা অর্জনে দৃষ্টি দেয়নি। আমদানির ওপরই তাদের নির্ভরতা ছিল। কারণ আমদানির সঙ্গে তাদের নিজেদের লোকজন যুক্ত ছিল। আমরাই প্রথম খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পদক্ষেপ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসা করতে আসেনি, আমরা সেবা করতে এসেছি। কারও কাছে হাত পেতে চলতে চাই না। মাটি ও মানুষক সম্বল করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি।  আমরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করবো। নিজেদের পুষ্টি নিশ্চিত করবো।‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ করেছি, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ করেছি, গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ফুড গ্রেড ল্যাবরেটরি করে রফতানির প্রতিবন্ধকতা দূর করেছি। অনেকগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। গবেষণার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। লবণাক্ত সহিঞ্চু ধান, খরা সহিঞ্চু ফল-ফসল এরকম অনেক ভালো ভালো গবেষণা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী সুষম খাদ্য নিয়ে প্রচারের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ছোট শিশু, বয়স্ক, মাতৃত্বকালে নারীদের কী কী খেতে হবে, কীভাবে খেতে হবে সেসব বিষয়ে মানুষকে জানাতে হবে। মানুষের জীবনমান উন্নত হোক, ক্রয়ক্ষমতা বাড়ুক। একইসঙ্গে সুষম খাদ্যগ্রহণের সচেতনতাও তৈরি হোক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কৃষিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ বাংলাদেশ হচ্ছে কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। আর এই কৃষির সাথে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলতে চাই না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করতে হবে। নিজের পুষ্টি নিজেরা নিশ্চিত করতে হবে। এবং সেটা আমরা নিজেরাই করবো। কারো কাছে হাত পেতে চলবো না। মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলবো। আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। এই স্বাধীনতাকে আমরা অর্থবহ করবো।’
করোনা ভ্যাকসিন টিকা প্রদান শুরু করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশও এখনও করতে পারে নাই। কিন্তু আমরা খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। আগাম অর্থ দিয়ে আমরা কীভাবে কোথায় এই ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, তা কেনার ব্যবস্থা করেছিলাম। আর সত্যি আমি আনন্দিত, সেটা আমরা দিতে পারছি।’ করোনাভাইরাস মহামারি থেকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মানুষের মুক্তি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.