দেবিদ্বারে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি নিয়ে সংঘর্ষে দুই মামলায় ২১১ আসামি

কুমিল্লা ব্যুরো: দেবিদ্বারে প্রধান শিক্ষকের কাছে ছাত্রীর শ্লীলতাহানিকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে সংঘর্ষ হয়। রাতেই অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। খোলা হয়নি স্থানীয় মাশিকাড়া বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট।
এ কারণে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিদ্যালয়ে আসেনি আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা। এদিন ভোরে পুলিশের খোয়া যাওয়া শটগানটি উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১৫ মার্চ) মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। একই দিন পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ২১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক মুক্তার আহমেদ মলি।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকালে মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাহালুল হক, সহকারী শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত। তবে শিক্ষার্থী শূন্য পুরো বিদ্যালয়। পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী দেখা গেছে। বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভাঙচুরের চিহ্ন আর ইটপাটকেল ছড়িয়ে আছে।
সভাপতি বাহালুল হক বিটিসি নিউজকে জানান, আজ বিদ্যালয় খোলা থাকলেও গতকালের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা কেউ আসেনি।
অভিযোগ রয়েছে, গত বুধবার সকালে পৌনে ৯টার দিকে প্রধান শিক্ষক তাঁর কক্ষে এক ছাত্রীকে ডেকে নেন। এ সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন প্রধান শিক্ষক। দ্বিতীয় দফায় সকাল ১০টার দিকে ওই ছাত্রীর শ্রেণি কক্ষে গিয়ে একই কাজ করেন তিনি।
ওই ঘটনার পর ছাত্রীর সহপাঠীরা বাড়ি গিয়ে ভুক্তভোগীর বাবার কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়। এরপর দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে এলাকাবাসী। এ সময় প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় বহিরাগত কিছু লোক এসে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়।
এতে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে সহকারী পুলিশ সুপার আমিরুল্লাহ ও থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং রাতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা বিদ্যালয়ে ভাঙচুর ও ইটপাটকেল ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্র্যানেড নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়।
রাত পৌনে ৯টার দিকে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী। প্রধান শিক্ষকসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনার পথে ধাওয়া করে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায়-দফায় সংঘর্ষে পুলিশের একটি শটগান খোয়া যায়।
শ্লীলতাহানির মামলায় প্রধান শিক্ষক মোকতল হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান করা হয়েছে। এর আগে বুধবার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব কিছুই জানি না। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বিটিসি নিউজকে জানান, দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে চালান করা হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান আব্দুল্লাহ আল মানছুর। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.