দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও ছাত্রলীগের ছাত্রত্ব বাতিলকারী সারওয়ার জাহান রাবিতে ভিসি হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপচার্য হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও ছাত্রলীগ বিরোধী মনোভাবাপন্ন, টিআইবিতে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক প্রো-ভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে প্রো-ভিসি হওয়ার পরপরই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন প্রশাসনে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তৎকালীন উপাচার্য ড. এম মিজান উদ্দিনকে যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করতেন। উপাচার্যের চেয়ে উপ-উপাচার্যের তৎপরতা ছিলো বেশি। ক্ষমতায় আসার পরপরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ও পুলিশি হয়রানি শুরু করেন। তার সময়ে ক্যাম্পাস এমনকি হল থেকেও ৮ জন ছাত্রলীগকে পুলিশ দিয়ে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। অথচ রাবি ক্যাম্পাসে এভাবে কখনো পুলিশ কোন ছাত্রকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

জানা গেছে, ড. মিজান উদ্দিন- চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল এর সময়ে রাবি ছাত্রলীগের আটজনকে ঠুনকো কারণে একাডেমিক বহিষ্কার করা হয়। এই বহিষ্কারে মুল ভুমিকা পালন করেন প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল। বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদ আল হোসেন তুহিন, সাবেক সহ-সভাপতি তন্মায়ন্দ অভি, হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মামুনুর রশিদও আছেন।

সেই সময় সিন্ডিকেট মিটিং করে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। বহিস্কারের প্রতিবাদে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচিও পালন করে রাবি ছাত্রলীগ। তবে এর কোন ফলাফল আসেনি।
সেই সময় প্রশাসন ভবনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখলেই বের হওয়ার জন্য হুমকি দিতেন এবং কোন বিষয়ে কথা বলতে গেলে উল্টো শাসাতেন তৎকালীন প্রো-ভিসি । ২০১৪-১৫ সালে প্রতিটা হলে হলে প্রশাসন কর্তৃক ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিটা হলে হলে প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় শিবিরের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য কর্মসূচি পালন করা শুরু। তাঁর নির্দেশে মতিহার হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবৈধ আখ্যা দিয়ে বের করে দেন।
চার বছর প্রোভিসি থাকা অবস্থায় তিনি দলীয় কোন লোকজনের চাকরি হয়নি। উল্টো যুবলীগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাপ কমানোর জন্য তৃতীয় চতুর্থ শ্রেনীসহ সব নিয়োগে বয়স ৩০ বেঁধে দেন। সেই সময় জামাত শিবিরের কয়েকজনকে শিক্ষক বানান। তার মধ্যে সাবেক ভিসি বিএনপি পন্থী ফাইসুল ইসলাম ফারুকীর ছেলের নিয়োগও আছে। ২০১৭ সালে তার মেয়াদ শেষ হলে টিকাপাড়ার তার নিজ বাড়ীতে স্থানীয় লোকজন ক্ষোভে ইটপাটকেলও ছুড়ে।
শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তার পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০০ সালে তৎকালীন রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিককে গুরুতর আহত করে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ। সেই সময় চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল ছাত্র উপদেষ্টা ছিলেন। সেই সময়ের ছাত্রলীগের অনেকেই এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও তার বাড়ী একই এলাকায়।
রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, সাবেক প্রো-ভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল একজন ভয়ানক হিংসাত্মক। তাঁর সহকর্মীদের সাথে আচরণ প্রচন্ড খারাপ। তিনি কখনও দলের দুর্দিনে শিক্ষকদের সাথে ছিলেন না। তাঁর বড় ভাই একজন ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন কিন্তু তার সাথে রাজনৈতিক মতবিরোধের জন্য ভালো সম্পর্ক ছিলো না।
রাবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির একজন সহ-সভাপতি বলেন, প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল মানেই ছাত্রলীগের জন্য একটি আতঙ্কের নাম। বিগত অভিজ্ঞতা থেকে ধরে নেওয়া যায় তিনি উপাচার্য হলে রাবি ছাত্রলীগ আবারও ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবে।
তিনি আরও জানান,প্রো-ভিসি হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাবেক প্রোভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজলকে চেনেন ছাত্রলীগ বিদ্বেষী একজন শিক্ষক হিসেবে।
এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে অতিথি ভবন ক্রয় কেলেংকারী। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন ঢাকায় জমিসহ ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকায় রাবির অতিথি ভবন ক্রয় করে। এতে জমির মূল্য ১১ কোটি এবং ভবন নির্মাণ ব্যয় দুই কোটি ধরা হয়। তবে টেন্ডার ছাড়াই কেনা ওই জমির মূল দলিলে জমির মূল্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে ১১ কোটি টাকা মূল্য দেখিয়ে অনুমোদন করা হয়। দলিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করা অর্থে ৮ কোটি টাকার গড়মিল ধরা পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই সিন্ডিকেট সভায় রাবির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবিরকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তদন্ত করে জমি ক্রয়ে ৮ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পায়। পরে তা প্রতিবেদন আকারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জমা দেয়। একই সাথে হাইকোর্টের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) অভিযোগ তদন্ত শুরু করে।
সাবেক উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজলের কাছে গত ১০ মে হাইকোর্ট থেকে আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত চেয়ে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সবিস্তারে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
২০১৬ সালে গেস্ট হাউস কেলেঙ্কারীর ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের প্রেস কনফারেন্সে হামলা করে প্রো-ভিসি সমর্থিত শিক্ষকরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক সামাদী।
শুধু তাই নয় তার নেতৃত্বে রাবিতে স্মার্ট কার্ড কেলেঙ্কারির ঘটনাও ঘটে। সেই সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্মার্ট কার্ডের টাকা ফেরত চেয়ে স্মারকলিপিও দেন।
ছাত্রীদের যৌন হয়রানির বিষয়ে তৎকালীন প্রো-ভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজলের ভূমিকা ছিলো নেতিবাচক। তার নিজ বিভাগের শিক্ষক কামরুল ইসলাম মজুমদার যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে প্রমাণিত হলেও তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেননি।
ছাত্রলীগ নেত্রী শাপলাকে রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক এটিএম রফিকুল ইসলাম কর্তৃক যৌন হয়রানির অভিযোগ আসে। অভিযুক্ত সেই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে ছাত্রলীগ লাগাতার আন্দোলন করলেও কোন ফলাফল আসেনি। উল্টো শাপলাকেই প্রশাসন বহিষ্কার করে।
রাবি ভূতত্ত¡ ও খনি বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. এস তাহের হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছাত্রশিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীকে একটি ক্লাস না করেও পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে সহযেগিতা করেন চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল। সেই সময় তিনি ভূতত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিভিন্ন টেন্ডারে ছিলো আরো ভয়াবহ বিএনপি জামাত কানেকশন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিউল ইসলাম লিলেন হত্যার আসামি রাজশাহী জেলা বিএনপি যুবদলের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল কে বিনা টেন্ডারে ৩৩ লাখ টাকার কাজ দেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও মতিহার থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সাধুর হত্যাকারী জামাত শিবিরের ক্যাডার বাবুকে দেওয়া হয় জিমনেসিয়াম সংস্কারের কাজ। এভাবেই তিনি স্থানীয় বিএনপি জামাতের আশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করে গেছেন।
একদিকে নীতিবাক্যের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ক্ষতি করে গেছেন অন্যদিকে বিএনপি জামাতকে বিভিন্নভাবে ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তার সময়ে একটা দলীয় লোকের চাকরি হয়নি।
২০০৯ সালে রাজশাহী জেলা টিআইবির আহবায়কের দায়িত্ব পালন কালে প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার সমালোচনা করে গেছেন লাগাতার।
২০১৫ সালে বিএনপি জামাতের লাগাতার অবরোধ হরতালে ইচ্ছে করেই তৎকালীন প্রশাসন ১০৫ দিন ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিএনপি জামাতের কর্মসূচি সফল করে যাচ্ছিলেন । পরে ছাত্রলীগের আন্দোলনের ফলে ক্লাস পরীক্ষা চালু করতে বাধ্য হয়।
এমন বিতর্কিত আওয়ামী লীগ বিরোধী মনোভাবের সাবেক এই প্রো-ভিসি আবারো ভিসি হিসেবে ক্যাম্পাসে আসলে শিক্ষক সমাজের জন্য ভীতির। তার আগ্রাসী প্রতিহিংসার কারনে অনেক শিক্ষক সেই সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিজ গ্রæপের বাইরের অনেক শিক্ষক কে ঠুনকো বিভিন্ন কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন।
শুধু শিক্ষক সমাজ ক্যাম্পাসে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর জন্যও আতংকের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ মনে করেন দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে আসলে আগের চেয়ে আরও বেশি স্বেচ্ছাচারী ও হিংস্র হয়ে উঠবেন।
তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী পরিবারের লোকজন চাই একজন বিতর্কমুক্ত উপাচার্য। যিনি পারিবারিক ও ব্যক্তিগতভাবে হবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পরিবারের। একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও ব্যক্তিত্ত¡সম্পন্ন শিক্ষক যিনি মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে মতিহারের এই সবুজ চত্বর কে শিক্ষক শিক্ষার্থী বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলবেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী। # 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.