দুবছর পর চার্জশিট, তিন বছরেও গ্রেফতার হয়নি কেউ

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্যা ডেইলি স্টারের প্রতিনিধি আরাফাত রহমানের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টার মামলার দুই বছর পর চার জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়। তিন বছরেও আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাদী ও তাঁর সহকর্মীরা।

পুলিশ বলছে, ঘটনা তদন্তে করে চার আসামির সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ায় তাদের নাম উল্লেখ আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তাকে (জিআরও) অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এখন আদালতে বিচার কাজ শুরু হবে।

আদালত সূত্র বলছে, করোনাভাইরাসের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাইলেই তাৎক্ষনিকভাবে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।

২০১৭ সালের ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দেশ ট্রাভেলসের বাস ভাঙচুরের ছবি তোলায় ডেইলি স্টারের বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক আরাফাতের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ ঘটনায় ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও দশজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন আরাফাত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

ওই চারজন হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আহমেদ সজীব, আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কানন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন।

ওই রাতেই সাইফুল ইসলাম বিজয় ও মাহমুদুর রহমান কাননকে ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের‘ কারণে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু পরে সেই বছরের নভেম্বরে কাননের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এর পরের বছরের ৪ ফেব্রুয়ারী বিজয়ের বহিষ্কারাদেশও তুলে নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাবুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তদন্ত করে আসামী আহমেদ সজীব, সাইফুল ইসলাম বিজয়, মাহমুদুর রহমান কানন এবং হাসান লাবনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাদের নামে গত বছরের ১৮ অক্টোবরে অভিযোগ দাখিল করে আদালতের জিআরও’কে পাঠানো হয়েছে। এখন আদালত বিষয়টি দেখবে।

রাজশাহী আদালতের মতিহার থানার জিআরও উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজ্জাক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ‘এটা অনেক পুরোনো মামলা, আমাদের কাছে এখন ওই মামলার কোন খোঁজ নেই।’ মামলাটির বিষয়ে জানতে রাজশাহীর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে খোঁজ নিতে বলেন তিনি।

রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘এটা অনেক দিন আগের মামলা। খুঁজে দেখতে হবে। বর্তমান করোনাভাইরাসের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাইলেই তাৎক্ষণিকভাবে কোন কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’ আগামী সপ্তাহে বিষয়টির খোঁজ-খবর নিবেন বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি আমি প্রক্টর হওয়ার আগের ঘটনা। আমি আসার পর ওই লিখিত অভিযোগের কোনো অ্যাভিডেন্স আমার কাছে আসেনি। যার কারণে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারিনি। এর আগেও একবার এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো লিখিত অভিযোগ আমি পায়নি।

প্রক্টর বলেন, আবারও যদি এ বিষয়ে আমার কাছে ডকুমেন্ট দেয়া হয় তাহলে মতিহার থানার ওসির সাথে কথা বলে সহজেই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।

মামলার বাদী আরাফাত রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তিন বছর আগে এ ঘটনায় মামলা করেছিলাম। থানায় খোঁজ নিলে গত বছর আমাকে বলা হয়েছিল চার্জশিট হবে, কিন্তু পরবর্তীতে সাংবাদিকে মাধ্যমে জানতে পারলাম চার্জশিট হয়েছে। কিন্তু আমাকে এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা কিছু জানান নি।

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আরাফাত আরো বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিদ্যমান। সেক্ষেত্রে আমার ওপর যেটা হয়েছিল আমি সুষ্ঠু বিচারের আশায় মামলা করেছিলাম। আমি তো বিচার পাইনি! এরই মধ্যে আরও বেশ কিছু সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছে। তারাও কোন বিচার পায় নি। আমি চাই শুধু আমার নয়, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে বা যারা এ ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছে তারা যেন সবাই সুষ্ঠু বিচার পায়।

তিন বছরেও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ আরাফাতের সহকর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সালমান শাকিল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, হামলার তিনবছর পার হলো। তবে এখনও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের থেকে শুনতে হচ্ছে তাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া হলেও সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটা বিষয়।

একদিকে যেমন দেশের আইন ব্যবস্থার সঠিক প্রয়োগের অভাবে তার প্রতি ভরসা হারিয়ে ফেলছি সেই সাথে একটি স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠছে। দ্রুতই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আরাফাতের ওপর হামলা চালায়। প্রতিবছর এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সাংবাদিক সংগঠন একসঙ্গে হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে থাকি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাসে বন্ধ থাকায় এবার সম্ভব হচ্ছে না। ক্যাম্পাস খুললে তিন সংগঠন মিলে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা চাই এ ঘটনার দ্রুত বিচার কাজ শুরু হোক।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: তানভীর তুষার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.