দীর্ঘ যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে গাজার শিশুরা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দীর্ঘ যুদ্ধে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গাজার শিশুরা। আগে খেলাধুলা, বিনোদন, পার্কে ঘোরা, মোবাইল গেমস, পড়ালেখা, বন্ধুবান্ধব ছিলো। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর তারা হারিয়েছে সব। মারা গেছে অনেকেরই খেলার সাথি।
গাজার প্রতিটি মানুষের মতোই যুদ্ধ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এসব ফিলিস্তিনি শিশুরা। আবারও ফিরে যেতে চায় চিরচেনা নিজেদের বাড়িতে। নিজের চিরচেনা জগতে, আপন ভুবনে।
সেখানের একটি দৃশ্যপট এমন যে, আকাশে উড়ছে রঙিন ঘুড়ি। সন্তর্পণে সুতো ছাড়ছে গাজার শিশুরা। খোলা আকাশে যতদূর যাওয়া যায়, উড়ে যায় ঘুড়ি। ওড়ার অধিকার নেই ফিলিস্তিনি শিশুদের।
চিরশত্রু ইসরাইলের সীমান্তের বেড়ায় আটকা পড়া তাদের জীবন। তারই মধ্যে চার মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ পরিস্থিতির মর্মান্তিকতার চূড়ান্ত চিত্র দেখে চলেছে তারা।
তাদের ভাষায়, আগে মারবেল, লাটিম দিয়ে খেলতাম। টিভি দেখতাম, মোবাইল গেমস খেলতাম। কিন্তু এখন কিছুই নেই। বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট নেই তাই মোবাইল চলে না। বাড়িতেই সব খেলনা রেখে এসেছি।
খান ইউনিস থেকে মায়ের হাত ধরে মিশরের রাফাহ সীমান্তের একটি শরণার্থী শিবিরে অন্য আরও অনেক শরণার্থীদের সঙ্গে থাকছে ইয়ামেন আবু রাজিক। জানায়, দীর্ঘ যুদ্ধে বিষণ্নতার কথা।
রাজিকের ভাষায়, আকাশজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান আর আমরা যুদ্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। তাই আমরা আকাশটাকে রঙিন করার চেষ্টা করছি। আমরা নিজেদের সুন্দর জীবনে ফিরে যেতে চাই।
এই ছোট্ট শিশুটি আরও বলছিলো, আমাদের কোন খেলনা নেই। আমরা বন্ধু হারিয়েছি, পরিবার হারিয়েছি। আমার বাবা আর ছোট ভাই উত্তরাঞ্চলে আছে। তারা কেমন আছে, বেঁচে আছে কিনা কে জানে!
তাই যুদ্ধ বন্ধ হলে সবাই নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে চায়।  গাজায় ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকেই বন্ধ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত চার মাসে প্রায় ৩৭৮টি স্কুল ভবন বোমা মেরে ধ্বংস করেছে ইসরাইল।
ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেখানকার ৪ হাজার ৩২৭ জন শিক্ষার্থী আর ২৩১ শিক্ষক ও ৯৪ জন অধ্যাপক নিহতের খবর নিশ্চিত করেছে।
রাফাহ সীমান্তের শরণার্থী শিবিরে তাঁবু না পেয়ে মুরগির খামারে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচটি পরিবার। জানায়, বিষ্ঠার গন্ধে জায়গাটিতে থাকা মোটেও সহজ নয়। কিন্তু এর চেয়ে ভালো ব্যবস্থা করতে পারেনি তারা।
বলেন, জায়গাটার অবস্থা খুবই খারাপ। ছাদ থেকে সারাদিনই পানি চুঁইয়ে পড়তে থাকে আমাদের শরীরে। তার ওপর তীব্র শীত। বাচ্চারা মুরগির খাঁচায় ঘুমাচ্ছে। এর চেয়ে বাজে পরিস্থিতি কি কল্পনাও করা যায়?
পরিবারটি আরও জানায়, শুরুতে থাকতে খুব বেশি কষ্ট হলেও এখন তারা মেনে নিয়েছেন যে খাঁচাগুলোই তাদের বিছানা। তার খামারটাই তাদের বর্তমান ঠিকানা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.