দীর্ঘ ছুটিতে নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে রাবি শিক্ষার্থীরা

রাবি সংবাদদাতা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পবিত্র রমজান, ঈদ এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসে ছিনতাই ও ছাত্রীদের ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্নজনকে নানাভাবে হুমকি দেয়ায় এ আতঙ্ক বিরাজ করছে ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

দীর্ঘ ৩৯ দিনের ছুটি শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগ থেকেই ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আর ছুটি শুরু হওয়ার পরপরই অনেকটা ছাত্রশূন্য হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস। তবে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যার পর ছাত্রলীগের অসাধু আচরণের কারণে চরম আতঙ্ক এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

তাই ক্যাম্পাসে ব্যাপক নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ এবার ঈদ এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি দীর্ঘ দিন হওয়ায় হল খোলা থাকায় অনেক শিক্ষার্থীই পড়ালেখার জন্য এখনো ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। তবে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর হাতে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে তাদের।

এ ছাড়া, ছিনতাই, ছুরিকাঘাত এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে টাকা চেয়ে হুমকি দেয়ায় এ আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত শনিবার একটি জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিককে মারতে আসে দুই ছাত্রলীগ কর্মী। তাদের অপকর্ম নিয়ে নিউজ প্রকাশিত হলে তারা ক্ষুদ্ধ হয় ওই সাংবাদিকদের ওপর।

এর জেরে মারতে আসে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ও সেক্রেটারির মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয় বলে জানা যায়। এর ঠিক তিন দিন পর গত বুধবার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম হৃদয়কে ছুরিকাহত করেছে হামজা নামে ছাত্রলীগের এক কর্মী।

আহত শিক্ষার্থী এখনো রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রামেবি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হৃদয় ছাত্রলীগ কর্মী হামজার বিরুদ্ধে মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে। একই ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে আমরণ অনশনে নামে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ কুমার।

এর আগে ভিসির প্রতি খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার বিচার করে আপনারা কোনো নজির সৃষ্টি করতে পারেননি। জুনিয়রদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার চেয়ে মৃত্যুই উত্তম বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন। তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করা হামজা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো: সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী বলে জানা গেছে।

সহসভাপতি সাদ্দাম ধমক দিয়ে হামজাকে চুপ থাকতে বলায় তিনি ছুরিকাহতের ঘটনাটি অস্বীকার করেন বলে এক সাংবাদিক জানান। এর এক দিন আগে ‘সেন্ডেল’ এর মতো একটি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে এমফিল শিক্ষার্থীকে মারধর করেন ছুরিকাহতকারী ওই ছাত্রলীগ কর্মী হামজা।

তা ছাড়া আরো কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ কয়েকটি বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ ওঠেছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দ্রুত এ ফাঁকা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা, অন্যথায় ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার মাত্র দুই দিনের মাথায় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী শিক্ষার্থীদের প্রতি বেপরোয়া আচরণ করে। এর কারণ হিসেবে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর মাদকাসক্তিকে দায়ী করেন ওই সিনিয়র শিক্ষার্থী।

তবে আরো কিছু শিক্ষার্থীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার ছাত্রলীগের বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ক্যাম্পাসে হঠাৎ ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী কেন বেপরোয়া হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষে সভাপতিসহ আমরা অনেকেই ঢাকায় থাকায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী সমস্যা সৃষ্টি করছে।

তবে দু-এক দিনের মধ্যে ক্যাম্পাসে এসে বিশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. লুতফর রহমান জানান, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেই অপরাধী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এ বিষয়ে মতিহার থানার ওসি (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান জানান, ক্যাম্পাসে যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে অপরাধীদের মামলা দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি গেটে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.