দিল্লির হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, শান্তি বজায় রাখার আবেদন রাখলেন তিনি

কলকাতা প্রতিনিধি: নয়াদিল্লিতে ট্রাম্পের সফরের মধ্যেই রণক্ষেত্র দিল্লি। সিএএ আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে মৃত্যু হল হেড কনস্টেবল-সহ ৫ জনের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে শান্তি ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।

রাজধানীর বুকে অশান্তি আগুন। সূত্রের খবর, সংঘাতের আবহে দিল্লির উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের গতকাল সোমবার বৈঠকে ডাকেন অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রসচিব এ কে ভাল্লা জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হয়েছে।

রাজধানীর ১০টি জায়গায় জারি ১৪৪ ধারা। আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সরকারি-বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন উপমুখ্যমন্ত্রী।

গত রবিবারের ঘটনার রেশ ধরেই সিএএ-আন্দোলনের সমর্থনকারী ও বিরোধীদের সংঘাতের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দিল্লির মৌজপুর। প্রাণ যায় দিল্লি পুলিশের এক হেড কনস্টেবলের। এছাড়াও আরও চার জনের মৃত্যু হয় বলে, দিল্লি পুলিশকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা ANI।
রবিবার সিএএ নিয়ে আন্দোলনকে ঘিরে, দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়ায় দিল্লির জাফরাবাদে। সোমবার তার রেশ গিয়ে পড়ে গোকুলপুরীতে। মুড়ি-মুড়কির মতো শুরু হয় ইটবৃষ্টি! ভাঙা হয় একাধিক বাড়ির কাচ। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পেট্রোল পাম্পে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে নামানো হয় আধা সামরিক বাহিনী।
এই হিংসার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাহুল গাঁধী। ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, দিল্লিতে যে হিংসার ছবি দেখা গিয়েছে, দ্ব্যর্থহীনভাবে তার নিন্দা করা উচিত। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ, তবে হিংসা কখনই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। দিল্লিবাসীর কাছে আমার অনুরোধ, যতই প্ররোচনা দেওয়া হোক, ধৈর্য্য ও সংযম বজায় রাখুন।
দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ। তাই এই পরিস্থিতিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল ট্যুইট করেন, ‘মাননীয় লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিল্লিতে আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সম্ভবত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের দিকে তাকিয়েই সঙ্ঘবদ্ধভাবে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসা ছড়ানো হয়েছে। বিষয়টির দিকে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও দিল্লির পুলিশ কমিশনার। আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। এই গণ্ডগোলের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র দেখছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে দাবি ৷
দিল্লিতে সিএএ-আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯। আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে ফের উত্তপ্ত রাজধানী। নতুন করে অশান্ত ভজনপুরা। দিল্লির মৌজপুর ও কবিরনগরে পাথরবৃষ্টি, দুটি গাড়িতে আগুন। মুখ ঢেকে পাথর বৃষ্টি। পুলিশকর্মীদের উপর পাথরবৃষ্টি। কারওয়ালনগরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন আমাদের প্রতিনিধি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্রহ্মপুরীতে হয় পুলিশের ফ্ল্যাগ মার্চ। নামানো হয় র‍্যাফ। সকালে বিধায়ক ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এরপরই দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অন্য দিকে, অশান্তির আশঙ্কায় জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরী, জহরি এনক্লেভ ও শিব বিহার – দিল্লি মেট্রোর এই ৫টি স্টেশন আজও বন্ধ রাখা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। গোটা উত্তর-পূর্ব দিল্লিজুড়ে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
দিল্লির হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘দিল্লিতে যা হচ্ছে, তাতে আমরা অত্যন্ত বিচলিত ও উদ্বিগ্ন। আমরা সব দেখছি। আমাদের দেশে হিংসার কোনও জায়গা নেই। আমরা সবাই শান্তি চাই। আমরা সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর বিশেষ (কলকাতা) প্রতিনিধি রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.