দিল্লিতে রাহুলের ডাকে সাড়াই দিল না তৃণমূল

(দিল্লিতে রাহুলের ডাকে সাড়াই দিল না তৃণমূল–ছবি: প্রতিনিধির)
কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: কখনও শুক্লপক্ষ, আবার কখনও বা কৃষ্ণপক্ষ। কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের সমীকরণটা যে শেষপর্যন্ত কোনদিকে মোড় নেবে তা বুঝে ওঠা ক্রমশই দুষ্কর হয়ে উঠছে। স্বাভাবিকভাবেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে বিজেপি বিরোধী প্রস্তাবিত সর্বভারতীয় জোটেরও ভবিষ্যৎ। মনে হচ্ছিল সম্পর্কের বরফ গলছে।কিন্তু ব্যাপারটা কি আদৌ সেরকমই? প্রশ্নটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো আজ শুক্রবার (০৬ আগস্ট) একটা ঘটনায়।
দিল্লির যন্তরমন্তরে কৃষকদের অবস্থান বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানাতে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ১৪টা বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত হলেও, এলেন না তৃণমূলের কেউই। কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে যন্তর মন্তরে একযোগে স্লোগানও দিলেন কংগ্রেস সহ উপস্থিত বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা। না, এই কর্মসূচিতে আসেননি অরবিন্দ  কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টিরও কোনও প্রতিনিধি। তবে এই দু’দলের অনুপস্থিতি নিয়ে কিন্তু তেমন কোনও চর্চাও নেই রাজনৈতিক মহলে। ভাবনার  কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের গতিবিধিটাই।
সরাসরি কোনও সঙ্ঘাত না হলেও এটা ঘটনা যে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কটা কোনওদিনই তেমন মসৃণ নয়। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতের কয়েকটা নির্বাচনে প্রবল  সম্ভাবনা থাকলেও কংগ্রেস-তৃণমূল কাছাকাছি না আসতে পারার নেপথ্যে আসলে দুই নেতানেত্রীর সম্পর্কের এই জটিলতাকেই দায়ী করে থাকেন রাজনীতির কারবারিরা। এরই সুযোগে জোট  বাঁধে ২ জাতশত্রু  কংগ্রেস এবং সিপিএম। এবং গত বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ে এই অস্বাভাবিক জোটবন্ধন। কিন্তু ২০২৪ এর ক্ষেত্রটা তো অনেক বড়। নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে কেন্দ্র থেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে কংগ্রেস ছাড়া যে গতি নেই তা বেশ ভালোই বোঝেন বিরোধী জোটের মূল কারিগর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তা বুঝেও কি রাহুলে অস্বস্তি?
লক্ষ্যণীয়, সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথমদিকে রাহুল গান্ধী যখন সব বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের আলোচনায় ডেকেছিলেন, তখন এড়িয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু তারপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফরে গিয়ে গত ২৮জুলাই সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে গিয়ে যখন তাঁর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন, তখন কিন্তু সেখানে উপস্থিত ছিলেন সোনিয়াপুত্র রাহুলও। বিরোধী জোট তৈরির কৌশল নিয়ে গভীর আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশও নিয়েছিলেন রাহুল। সুফলও ফলেছিল দ্রুত। মমতা কলকাতায়  ফিরে আসার পরে দিনদুয়েক আগে দিল্লিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ডাকা ব্রেকফাস্ট মিটিং-এ উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়,মহুয়া মৈত্র সহ তৃণমূলের ৫ সাংসদের। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা জানিয়ে সেদিন মোদী-সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেদিন কড়া বিবৃতিও দিয়েছিলেন সৌগত রায়। কিন্তু তারপরেই আজ আবার ছন্দপতন। রাহুলের বৈঠকে গরহাজির তৃণমূল।
অথচ কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে বরাবরই সরব মমতা। পেট্রোপন্যের মূল্যবৃদ্ধি, পেগাসাস বিতর্ক সহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংসদের চলতি বাদল অধিবেশনে তৃণমূল কিন্তু কংগ্রেসের হাতে হাত মিলিয়েই ক্রমাগত আক্রমণ হেনে চলেছে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। ট্রাক্টর চালিয়ে রাহুলের সংসদ ভবনে যাওয়াটাও উপভোগ করেছে বিজেপি-বিরোধী দলগুলো। কংগ্রেসও পেগাসাস ইস্যুতে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ নিয়েছে প্রকাশ্যেই। এরপরেও রাহুলের নেতৃত্বে তৃণমূলের কীসের অস্বস্তি, গবেষণার বিষয় এখন সেটাই।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। # 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.