দিনাজপুরে ডিসির স্বাক্ষর নকল করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রতারক স্বামী-স্ত্রী গ্রেফতার

দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর নকল করে পত্রিকায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের অভিযোগে আনিকা তাসনিম সরকার তিশা নামে এক নারী ও তার কথিত স্বামী আব্দুল মান্নানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
৩৮তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করা কপি দেখিয়ে নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে পরিচিত দিতেন তিশা। এ কাজে তার কথিত স্বামী আব্দুল মান্নানও জড়িত ছিলেন।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় দিনাজপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন, সহকারী পুলিশ সুপার (কাহারোল) রওশন আলী ও দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম।
গ্রেফতার প্রতারক চক্রের প্রধান তিশা জেলার ফুলবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহজাহান আলী সরকার পুতুর মেয়ে। আর তার কথিত স্বামী আব্দুল মান্নান নাটোর সদর উপজেলার চাঁন মিয়ার ছেলে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের কারারক্ষী পদে চাকরি করলেও সেখানে থাকতেন না। তারা দুইজন দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। আব্দুল মান্নান তাসনিম সরকার তিশার তৃতীয় স্বামী বলে জানা গেছে।
পুলিশ সুপার জানান, গত ১৪ জানুয়ারি দৈনিক মানবকন্ঠের প্রতিনিধি সুলতান মাহমুদকে প্রতারক তিশা দিনাজপুর ডিসি অফিসের এসএ শাখায় কর্মরত আছেন বলে পরিচয় দেন। এ সময় তিনি আঞ্জুমান আরা আজমেরী নামে নিজেকে পরিচয় দেন। একই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। পরদিন ১৫ জানুয়ারি জাতীয় দৈনিক মানবকন্ঠ ও স্থানীয় দৈনিক খবর একদিন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়। প্রকাশের পর বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে তিনি মানবকন্ঠের প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি জেলা প্রশাসককে জানান, ডিসি অফিসের আঞ্জুমান আরা আজমেরী নামে এক ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি তাকে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।
পরে জানা যায় আঞ্জুমান আরা আজমেরী নামে ডিসি অফিসে কোনো নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বা কোনো কর্মকতা নেই। ভুয়া পরিচয়দানকারী তিশা প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর স্ক্যানের মাধ্যমে জাল জালিয়াতি করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে মানবকন্ঠের সাংবাদিক বাদী হয়ে তিশাকেসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেন। মামলাটি দায়েরের পর থেকে দিনাজপুর কোতয়ালী থানা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে প্রতারক তিশা ঢাকা, নাটোর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে থাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে কৌশল অবলম্বন করে তিশা ও তার স্বামী আব্দুল মান্নাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ২০২১ সালে যাত্রাবাড়ী থানায় প্রতারণার মামলায় তিশা ও তার দ্বিতীয় স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিশা ইতোমধ্যে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। তার তৃতীয় স্বামী আব্দুল মান্নান কারারক্ষী পদে চাকরিরত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে স্ত্রী তিশার সঙ্গে প্রতারণা কাজে জড়িত রয়েছেন। দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর স্ক্যানের মাধ্যমে জাল করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর ১৮ জনের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে তারা বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা, ছয়টি মোবাইল, দুইটি পাসপোর্ট, নিয়োগপত্রের প্রজ্ঞাপনসহ নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়োগপত্র আদেশের বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সংস্থাপন শাখা ও জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকীর স্বাক্ষর দিয়ে বিভিন্ন পদে ৫০ জন জনবল নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি গত ১৫ জানুয়ারি একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পরপরই দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত একটি গণবিজ্ঞপ্তি জেলা প্রশাসকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে প্রকাশ করা হয়। জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেজে সতর্কীকরণ বার্তা শিরোনামে এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি দপ্তরের আইডিতেও এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর দিনাজপুর প্রতিনিধি মো: ইয়ামিন সরকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.