দিঘলিয়ায় সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া মাঠ

দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি: সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া মাঠজুড়ে। অগ্রহায়ণের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদে ভরা সরিষার ফুল। শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো উপজেলার প্রতিটি মাঠ জুড়ে কেবল চোখে পড়ে শুধু সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ।
শীতের এই শিশির ভেজা সকালে সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুলগুলো সোনা ঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছানো জমিন। যেন প্রকৃতি কন্যা সেজেছে হলুদ বরণ সাজে।
দিঘলিয়া  উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গেলে এমনই চিত্র দেখা যাচ্ছে। চারপাশে শুধু সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমনই প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। কখনো সবুজ, কখনো সোনালী, কখনো বা হলুদ। এমনই ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এ পর্যায়ে হলুদ সরিষা ফুলের চাদরে ঢাকা পড়ছে এ ফসলের মাঠ।
সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটিতে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় এ অঞ্চলে সরিষার বেশি আবাদ হয়। বর্তমানে সরিষা একটি লাভজনক ফসলে পরিণত হওয়ায় ধীরে ধীরে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গাঢ় হলুদ বর্ণের সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে গুঞ্জন করছে। চলছে মধু আহরণ। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ মাঠে নেমেছে। শীতের শিশির সিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ ভাসছে বাতাসে। সরিষার মাঠ দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। হেমন্তকালের মাঠে মাঠে সবুজের অপার সমারোহ এখন আর নেই। দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে মাঠে মাঠে।
উপজেলার  দিঘলিয়া ইউনিয়নের ফরমাইশখানা গ্রামের কৃষক রাকিব মোল্লা জানান, গেল বছর সরিষার দাম ভালো ছিল। সরিষা অল্প খরচে বেশি লাভজনক ফসল। সরিষার চাষ পদ্ধতি খুব সহজ ও কম খরচে অল্প সময়ে খুবই লাভ জনক ফসল। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে জমিতে সরিষা বীজ বপন করা হয় বলে জানান তিনি।
উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের কৃষক খান আবু সাঈদ জানান, দেশীয় সরিষার জাতগুলোর চেয়ে উন্নত জাতগুলো ফলন বেশি হয়। গত বছরের চেয়ে এ বছর সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন এ বছর সরিষার বাজারও ভালো যাবে। এবার ৪ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফসল ঘরে তুলবে বলে জানান তিনি।
উপজেলার আড়ংঘাটা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মান্নান জানান,সরিষা আবাদে সেচ ও সার কম লাগে। তাছাড়া সরিষার পাতা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার। প্রতি বিঘায় ৪/৫ মন সরিষা হয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে উপজেলায় বাড়ছে সরিষা আবাদ।
উপজেলার ফরমাইশখানা গ্রামের সফল কৃষক মোল্লা কামাল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দেশীয় সরিষার জাতগুলোর চেয়ে উন্নত জাতগুলো ফলন বেশি হয়। গত বছরের চেয়ে এ বছর সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন এ বছর সরিষার বাজারও ভালো যাবে। এবার ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফসল ঘরে তুলবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ বছর ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্জিত হয়েছে ৪৫ হেক্টর। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১হেক্টর, চাষ হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এবছর সরিষার চাষ বেশি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আব্দুস সামাদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সম্পূরক রবি শস্য হিসেবে সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এরই মধ্যে চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগেই ফুল এসে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এবার সরিষা আবাদি কৃষকরা বাড়তি মুনাফা পাবে বলে মনে করেন তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.