দিঘলিয়ার শওকাত শেখ নার্সারি করে সফল 

দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ব্রহ্মগাতিতে  নার্সারি করে সফলতা পেয়েছেন মোঃ শওকত শেখ। কৃষি কাজের পাশাপাশি নার্সারি পেশাকে আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। এলাকার বিভিন্ন জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি বন্ধক ও লিজ নিয়ে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ২০২০ সালে শওকাত নার্সারী নামে ছোট্ট এক পরিসরে একটি নার্সারি শুরু করেন তিনি। প্রথমে কিছু বনজ ও ফলদ চারা দিয়ে তার নার্সারির যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে চলতে থাকে তার এ নার্সারি ব্যবসা।
তাঁর এক বন্ধুর পরামর্শে এবং টিভিতে নার্সারির ওপর কৃষি বিষায়ক অনুষ্ঠান দেখে নার্সারি করার আগ্রহ জাগে তাঁর। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে তাঁর এ নার্সারিতে। মাত্র ২ বছরেই এ নার্সারি ব্যবসায় সফলতার মুখ দেখতে পাওয়ায় এখন তিনি লাখপতি। ব্রহ্মগাতী গ্রামের মোঃ আমানত শেখের পুত্র মোঃ শওকাত শেখ ব্রহ্মগাতী ও দিঘলিয়া গ্রামে মোট ৫টা নার্সারীর মালিক। ৪/৫ বিঘা জমির ওপর এ সকল নার্সারীতে ২০/২২ প্রজাতীর বনজ ও ফলজ গাছের চারা নিয়ে গড়ে তুলেছেন নার্সারী। নার্সারি ব্যবসার সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এ কাজে।
শওকাত শেখ জানান, বর্তমানে তার ৪ বিঘা জমিতে নার্সারি রয়েছে। এবছর তিনি লিজ ও বন্দকী মিলে খন্ড খন্ড জায়গায় বহ্মগাতী ও দিঘলিয়ায় ৫টি আলাদা আলাদা নার্সারী গড়ে তুলেছেন। তিনি কিছু জমিতে নারকেল ও সুপারীর চারা এবং বাকি জায়গায় বিভিন্ন বনজ, ফলদ, ঔষধি ও ফুলের চারা করেছেন। এর মধ্যে এ বছর তিনি তার নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা, বিভিন্ন প্রজাতির কুল ও পেয়ারার চারা রোপন করেছেন। তার এ নার্সারীতে রয়েছে দেশের ও বিদেশের নানা জাতের আম, লিচু ও জামরুলের কলম চারা। যা মাত্র তিন থেকে সাড়ে ৩ বছরের মধ্যেই ফলন ধরে। এছাড়া বিভিন্ন জাতের বনজ চারা ছাড়াও দেশি-বিদেশি জাতের আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, বেদানা, কমলা, আমড়া, শরুফা, লেবু, জাম্বুরা, সফেদা, মাল্টা, বরই, কামরাঙ্গা, মিষ্টি তেঁতুল, চালতা, লিচু, বেল, লটকনসহ প্রায় দেড়’শ জাতের চারা রয়েছে।
আমের জাতের মধ্যে হাঁড়িভাঙা, ল্যাঙড়া, আম্রুপালি, হীম সাগর, ফজলি, মালদাই, কাঠিমণ, বেনানা ম্যাঙ্গো সহ প্রায় ১২ প্রজাতির চারা রয়েছে। ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়না টগর, হাছনাহেনা, বকুল, বেলি, গন্ধরাজ, জবা, পাতাবাহার, ঝাউ গাছসহ প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির চারা রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছও। রাজধানী ঢাকা, কুষ্টয়া, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, বাগেরহাট থেকে এসে এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন ব্যক্তি।
তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে সুপারি, নারিকেল, আম ও মাল্টার চারা বিক্রি হচ্ছে। এবছর তিনি এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার বেশি চারা বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার চারা চলতি মৌসুমে বিক্রি হবে বলে তিনি আশাবাদী। তার এখানে ২ থেকে ৫ জন কর্মচারী নিয়মিত কাজ করে। উপজেলার সেনহাটি বাজার, পথেরবাজার, উপজেলা মোড়সহ সারা উপজেলায় এবং তার নার্সারি থেকে সারা বছর চারা বিক্রি হয়। চারা বেচাকেনার জন্য বিভিন্ন বাজারে তার প্রদর্শনী কেন্দ্র রয়েছে। এখান থেকে সড়ক ও নৌপথে সহজেই চারা পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, নার্সারি ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় তার এ নার্সারিগুলো আরো বর্ধিত করার জন্য কাজ চলছে। এ নার্সারিগুলোকে আরো বৃহৎ আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তিনি নার্সারি ব্যবসার বাইরেও কৃষিকাজের পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আব্দুস সামাদ জানান, নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা। বেকার যুবকরা নার্সারি করে স্বাবলম্বী হতে পারে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.