দিঘলিয়ায় নানা নেশাদ্রব্যের রমারম ব্যবসা অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন আইন শৃঙ্খলা নিম্নমুখী

প্রতীকী ছবি
বিশেষ (খুলনা) প্রতিনিধি: দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নানা ধরনের নেশা দ্রব্যের অবাধ আমদানি ও বেচাকেনা চলছে। যুব সমাজ এ সব নেশার চক্রে পড়ে ধ্বংসের দার প্রান্তে। অভিভাবকমহল উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। আইন প্রয়োগকারি সকল সংস্থা অজ্ঞাত কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলার ফরমাইশখানা গোলারঘাট, পালপাড়া রোড, খাঁ পাড়া, কাঠালতলা ও বার্ম্মাশেল ঘাটের ভৈরব নদী কূল, দেয়াড়া খেয়াঘাট ও স্টিমারঘাট এলাকা, দেয়াড়া কলোনি, দেয়াড়া ৪ নং ওয়ার্ড এলাকা, দেয়াড়া পূর্বপাড়া, দেয়াড়া জ্ঞানীর মোড়, সেনহাটি লিচুতলা, আদর্শ পল্লী, শিব মন্দীর এলাকা, সেনহাটি কাটানিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা, উত্তর চন্দনীমহল, দক্ষিণ চন্দনীমহল, সুগন্ধি স্কুলের সামনে, সেনহাটি স্কুলের পিছন দিকে, পথেরবাজার স্কুলের পূর্ব পাশে, মহেশ্বরপুর, নন্দনপ্রতাপ, আড়ুয়া ফেরিঘাট, দেয়াড়া শানেওয়াজ মিলের উত্তরের নদীর কূলের ফাঁকা মাঠ, দেয়াড়া পূর্বপাড়া কবরস্থানের পশ্চিমে বন এলাকা ও পূর্বে মাঠ এলাকা, লাখোহাটি, কামারগাতী, বাতিভিটাসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গাঁজা, ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নানা ধরনের নেশা দ্রব্য আমদানি ও অবাধে কেনাবেচা চলছে।
এসব নেশা দ্রব্যের ক্রেতা-বিক্রেতাদের চক্রে পড়ে আজ যুব সমাজ হুমকির মুখে। নানা ধরনের নেশায় আসক্ত এসব যুবকেরা পারিবারিক ও সামাজিক কোন অবরোধ মানছেনা। পরিবারে নানা বিশৃঙ্খলা, ভাংচুর ও অশান্তি সৃষ্টি করছে। যে কারণে অভিভাবক মহল একদিকে তাদের সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন, অপর দিকে এসব নেশা দ্রব্যের আমদানি ও অবাধে কেনা-বেচা দেখে ক্ষুব্ধ। অপরদিকে প্রভাবশালী মহলের গোপন সখ্যতা থাকার কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনা।
দিঘলিয়ার ফরমাইশখানা ও দেয়াড়া গ্রামের নেশায় আসক্ত কয়েকজন যুবকের মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এ সব নেশা দ্রব্য যারা আমদানি ও বেচাকেনা করছে তারা খুবই সংঘবদ্ধ ও এদের পিছনে পর্দার আড়ালে রয়েছে সমাজে অস্বীকৃত প্রভাবশালী মহল। যে সব কারণে সমাজে শান্তিপ্রিয় মানুষ এদের বিপক্ষে কথা বলতে ভয় পায়।
এ নেশাদ্রব্য কেনাবেচার অশুভ চক্রের পর্দার আড়ালের ইঙ্গিতে মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। শুরু হয় আধিপত্যের লড়াই, মারামারী-কোপাকুপি, রক্তাক্ত জখম, হত্যাসহ নানা দুর্ঘটনা। ঘটে আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ড।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব দিঘলিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ শামীমুল ইসলামের বাড়ি, শহীদ মোড়লের বাড়িতে গ্রীল কেটে দুইবার বাড়িতে দুঃসাহসিক চুরি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
অপর দিকে গত শনিবার দিবগত রাতে দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইচ চেয়ারম্যান শেখ মমতাজ শিরিন ময়না ও দিঘলিয়া উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি নেতা আল মামুনের বাড়িতে এবং রবিবার দিবাগত রাতে মসজিদের ইমামের বাড়িতে দুঃসাহসিক চুরি সংঘঠিত হয়েছে। এ সকল চুরি ও এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা এলাকায় অপরাধ তৎপরতা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিজ্ঞমহল।
এদের বিরুদ্ধে কথা বললে তারা নানাভাবে তাদের উত্তাক্ত করে এলাকা ছাড়া করে। এলাকায় পুলিশ এলে এ সব
নেশা দ্রব্য আমদানি ও বেচাকেনার সাথে জড়িত মহল নানা জনের প্রতি সন্দেহের তীর ছোঁড়া আরম্ভ করে। অনেকের কাছে ক্ষতিপূরণ ও দাবি করে। এদের নানা অত্যাচারে ইতোমধ্যে অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছে। অপর এক সূত্র থেকে জানা যায়, এসব নেশা দ্রব্যের আমদানি ও বেচাকেনার ব্যাপারে পুলিশকে জানাতে গেলে পুলিশ বলে কারা, কোথায় এবং কোন সময় বহন করে এবং বেচাকেনা করে তাদের হাতেনাতে ধরিয়ে দিতে।
উক্ত সূত্র দুঃখ করে এ প্রতিনিধিকে জানান, আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থার প্রচার মাধ্যমে প্রচার শুধুই লোক দেখানো। দিঘলিয়া উপজেলার সর্বত্র সকল প্রকার নেশা দ্রব্যের অবাধ কেনাবেচা চললেও এবং মাঝে মধ্যে মাদক কারবারিদের কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও মাদকের গডফাদাররা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দিঘলিয়ায় মাদকের ব্যাপারে অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকা বলে এলাকাবাসী জানায়। এ দিকে এ নেশা চক্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে জালাল ও মামুন নামে আইন প্রয়োগকারীর দুইজন সোর্স এ দিঘলিয়ার মাটিতে খুন হলেও খুনিরা স্ব অবস্থানে বহাল। ব্যবসার কোনো কমতি নেই বলে জানা যায়। এমনকি সেনহাটি বাবু, শান্ত ও অপর বাবুর ওপর হামলা ও রক্তাক্ত জখম করা ও মাইনুলকে হত্যা মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্যের লড়াইয়ের জের।
এলাকাবাসী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, দিঘলিয়া থানা পুলিশ মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করলেও আইনের ফাঁক ফোঁকড়ে বেরিয়ে এসে পুনরায় জোরেসোরে ব্যবসা করছে।
দিঘলিয়া থানার বিভিন্ন গ্রামে নানা নেশা দ্রব্যের অবাধ আমদানি ও কেনাবেচার ব্যাপারে কথা হয় দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ রিপন কুমার সরকার এর সাথে। তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন,দিঘলিয়া থানা পুলিশের নেশা দ্রব্য বিক্রির সাথে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জনান, গত ৩ মাসে দিঘলিয়া থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ২৪টি মামলা রুজু করা হয়েছে এবং ২৯ জন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদের কাছ থেকে ৩ কেজি ২০৬ গ্রাম গাঁজা, একটি গাঁজা গাছ ও ৬০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.