দিঘলিয়ায় কলমি শাক চাষে সফল শেখ মো. গোলাম মোস্তফা

দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ মোঃ গোলাম মোস্তফা । তিনি পেশায় একজন কৃষক। এক সময় ধানের চাষ করতেন। ধান চাষ করা খুবই কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। তাই একসময় ধান চাষ ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন শাকসবজি চাষ। বাড়ির আশপাশে থাকা জমিতে ধান কাটার পর চাষ করেন রবি মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি। একদিন বাজারে গিয়ে দেখেন এক লোক কলমিশাক বিক্রি করছেন। সেটা দেখে তার কাছ থেকে কলমি চাষের সব কৌশল জেনে নেন। তারপর ওই কৃষকের পরামর্শ অনুসারে কলমির চাষে উদ্বুদ্ধ হন।
তিনি দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুগন্ধী তেঘাড়ির বিলে ধান চাষের জন্য লিজ নেওয়া ৪৫ শতক জমিতে ধান চাষ বন্ধ করে দেন। তিনি উক্ত জমি কলমি শাক চাষের জন্য ভালোভাবে মাটি প্রস্তুত করেন।
তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান ২০১৭ সালে উক্ত জমিতে ধান চাষ বাদ দিয়ে কলমি শাকের আবাদ করেছি। সেই থেকে আমি উৎপাদিত শাক বাজারে বিক্রি করে আসছি। আমি প্রায় সারা বছর এ জমি থেকে শাক কাটি এবং চিকন রশি দিয়ে আঁটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করি। প্রথম বছর তিনি ভালো টাকা আয় করেন কলমিশাক বিক্রি করে। তারপর থেকে শুরু করেন এই কলমিশাক চাষের। প্রায় ৭ বছর যাবৎ তিনি লিজ নেওয়া উক্ত ৪৫ শতক জমিতে কলমিশাক উৎপাদন করে বিক্রি করছেন।
কলমি শাক খুব কম সময়ের মধ্যেই বিক্রির উপযোগী হয় এবং জমির একপাশ থেকে শাক কাটা শুরু করে সম্পূর্ণ জমির শাক কাটতে কাটতে পুণরায় শাক কাটার উপযোগী হয়ে যায় বলে জানান তিনি। বৈশাখ মাসের শুরু থেকে কলমিশাক বিক্রি শুরু করে তা সারা বছর কমবেশী বিক্রি করা যায়। তবে কার্তিক মাস পর্যন্ত উৎপাদন ভালো হয়। এভাবে বছরে তিনি প্রায় সারা বছর কলমি শাক বিক্রি করতে পারেন। প্রতিদিন তিনি জমি থেকে শাক কেটে আঁটি বেঁধে বাজারে নিয়ে পাইকারী অথবা খুচরা বিক্রি করেন। খুচরা বিক্রি করলে দাম বেশী পাওয়া যায়। প্রতি মোঠা বিক্রি করেন ১০ টাকা দরে। এভাবে তিনি প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেন।
তিনি বলেন, শবজি চাষেপুঞ্জি কম লাগে এবং শ্রমও কম লাগে। কলমি শাক চাষের জন্য তিনি প্রচুর পরিমাণে গোবর সার ব্যবহার করেন। ফলে তার উৎপাদন খরচ কম হয় বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান। তার দেখাদেখি আরো অনেক কৃষক তার কাছ থেকে উৎসাহ এখন তারাও বাজারে কলমিশাক বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, আগের ধানের চাষের চেয়ে এখন এই কৃষিকাজ করে অনেক ভালো আছি। ধানের চাষে অনেক কষ্ট করতে হতো এবং খরচও বেশী হতো কিন্তু এ কৃষি কাজে আমার পরিবারের সবাই আমাকে সহযোগিতা করে ফলে কষ্ট কম হয়। তিনি আরো জানান, প্রতিমাসে তার উৎপাদন ব্যয় হয় ১৫ হাজার টাকা। বছরান্তে তার ৬০ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকে।
দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের উক্ত সফল শবজি চাষির সাথে কথা হয়।
তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, শবজি চাষে পুঁজি কম লাগে। পরিশ্রমও কম লাগে। আমরা সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শবজি উৎপাদন করি। কিন্তু আমরা সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা সহায়তা পাইনা। যে কারণে দিঘলিয়া উপজেলায় শবজি চাষের জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
দিঘলিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এ উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা কলমি শাকের চাষ করেন এবং এ উপজেলায় মোট সবজি চাষের পরিমাণ ৮১০ হেক্টর। সবজি চাষীদের কোনো সরকারি প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র ভারী চাষের উপর সরকারি প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.