দায় নিচ্ছে না প্রভাবশালী উজ্জ্বল সরকার রংপুরে বাসনা রানীর সদ্য ভূমিস্ট সন্তানটির এখন কি হবে

রংপুর ব্যুরো: রংপুর মহানগরীর একটি বেসরকারী হাসাপাতালে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বাসনা রানী। কিন্তু তার পাশে কেউ নেই। চার বছরের পরকীয়ার সম্পর্কে বিয়ে না করে উজ্জল সরকার নামের এক প্রভাবশালীর সাথে অবৈধ মেলামেশায় এই সন্তান হওয়ায় নিজ সম্প্রদায় এবং স্বামীর পক্ষ থেকে তাকে এক ঘরে রাখা হয়েছে। ক্লিনিক থেকে রিলিজ করে দেয়া হলেও টাকার অভাবে ক্লিনিকেই সন্তানসহ অবস্থান করছেন তিনি। বের হয়ে শিশুসহ কোথায় যাবেনও তারও কোন ঠিকানা নেই। অন্যদিকে প্রভাবশালী উজ্জল সরকার ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানামুখি তত্পরতা চালাচ্ছে। প্রসুতি এই মাতা তার সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ।

রংপুর মহানগরীর আপডেট ক্লিনিকের ৩০২ নম্বর রুমে সদ্য কন্যা সন্তান জন্মদানকারী বাসনা রানী জানান, আমার স্বামী নগরীর পালাপাড়া এলাকার অলোক সরকার ভারতে ব্যবসার কাজে থাকায় রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের সাহবাজপুর গ্রামের মৃত্যু পুলক সরকারের পুত্র উজ্জল সরকারের সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিগত চার বছর ধরে উজ্জল আমাকে বিয়ে না করেই স্ত্রীর মতো ব্যবহার করতে থাকে। আমি বিয়ে করার কথা বললে সময়ক্ষেপন করতে থাকে।

এরপরও আমি তাঁকে ব্যবসার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা প্রদান করি। এক পর্যায়ে আমি অন্ত:স্বত্বা হয়ে পড়লে উজ্জল আমাকে সন্তান নস্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকে।

এতে রাজি না হলে উজ্জল সরকার আমাকে কুড়িগ্রামের একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করার চেস্টা করে। কিন্তু ভগবানের ইচ্ছায় আমি বেঁচে গেলে উজ্জল আমাকে সেখানে রেখে পালিয়ে আসে। আমি সেখান থেকে বেঁচে এসে রংপুর কোতয়ালী থানায় মামলা দিতে যাই। পুলিশ বিষয়টি ধর্ষন নয় বলে মামলা না নিয়ে আমাতে ফিরিয়ে দেয়।

বাসনা রানী জানান, পুলিশ মামলা না নেয়ায়  আদালতে মামলা করতে গেলে উজ্জল কোর্টে হয়ে আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়ে সন্তানের দায় নিতে রাজি হয়। এসময় কোর্টে উপস্থিত লোকজন এর নিশ্চয়তা চাইলে উজ্জল আমার সাথে দৈহিক মেলা মেশা এবং আমার গর্ভে সন্তানের দায় স্বীকার করে সাদা কাগজে লিখে দেন। এ সময় উজ্জল সরকারের বড় ভাই বিপ্লব সরকার ও ভগ্নিপতি অবসর প্রাপ্ত আঞ্চললিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুবাস চন্দ্র সরকার মিমাংসার কথা বলে উজ্জল সরকারকে কৌশলে কোর্ট চত্বর থেকে নিয়ে পালিয়ে যায়।  এদিকে আদালত চত্বরেই  আমার প্রসব বেদনা উঠলে স্থাণীয় লোকজন আমােেক রংপুর মহানগরীর আপডেট ক্লিনিকে ভর্তি করায়। সেখানে আমি গত শুক্রবার (২ আগসট) কন্যা সন্তানের জন্ম দেই।

বাসনা রানী বিটিসি নিউজকে জানান, আমার এখানে উজ্জল বা তার পরিবারের কেউ এখনও খোঁজ নিতে আসেনি। আগের স্বামীও আমাকে নিচ্ছে না। আমার পিতামাতাও আমাকে বাড়িতে তুলছে না। গ্রামবাসিও আমাকে এক ঘরে করে রেখেছে। আমি এখন কোথায় যাবো। আমি আমার কন্যা সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাই। হাসাপাতালে কেউ আমাকে দেখতেও আসছে না। আমাকে ক্লিনিক থেকে রিলিজ দিয়েছে কিন্তু টাকা না দিতে পারায় আমি ক্লিনিক থেকেও যেতে পাচ্ছি না। আবার ক্লিনিক থেকে বের হয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে কোথায় উঠবো, তারও কোন ঠিকানা নেই। বাবা মাও মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন। আমি এখন কি করবো। ক্লিনিক থেকে বের হয়ে আদালতেও যেতে পারছি না। পুলিশের কাছে যেতেও পারছি না। উজ্জল সরকার প্রভাবশালী হওয়ায় সেসব কিছু নিজেদের মতো করে নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।

এলাকাবাসি জানান, রংপুর মহানগরীর পালপাড়ার অপু চন্দ্র দাসের সাথে পীরগঞ্জ উপজেলার মিঠিপুর গ্রামের সুবাসের কন্যা বাসনা রানীর সাথে ১৪ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে বাসনার গর্ভে একটি পুত্র সন্তান হয়। বাসনার স্বামী অপু চন্দ্র দাস ব্যবসার কাজে ৭ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করে। এই সুযোগে উজ্জল সরকারের বাসনাকে বিয়ের প্রলোভনে ৪ বছর ধরে স্বামী স্ত্রী’র পরিচয়ে (ছদ্দ নামে) আনন্দ নগর, ভিন্নজগৎ স্বপ্নপুরী এবং একাধিকবার রংপুর নগরীর ভাড়াকৃত কট্টিপাড়ার ১নং রোর্ডের ৮৭ নং বাসায় বউকে অনত্র পাঠিয়ে দিয়ে বাসনার সাথে দৈহিক মেলা মেশা করত। এক পর্যায়ে বাসনা গর্ভবর্তী হয়ে পড়লে তাকে বিয়ে করার জন্য উজ্জল বাসনার কাছ থেকে নগদ ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।

বাসনা রানীর পিতা সুবাস চন্দ্র বিটিসি নিউজকে জানান, উজ্জল সরকার আমার মেয়ের জীবন নস্ট করে দিয়েছে। এখন আমাদের পরিবারের কিছুই করার নেই। উজ্জল সরকার ওকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সন্তানের স্বীকৃতি দিক এটাই আমি চাই। তা না হলে আমি ওই মেয়েকে কখনই ঘরে তুলবো না।

এদিকে এই ঘটনার বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা উজ্জল সরকারের সাথে ফোনে এবং তার ভাড়াকৃত বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগের চেস্টা করেও তাকে পান নি। বরং সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেস্টা করায় মুসফিক নামে এক ব্যক্তি এসআই পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে বাসনা রানী ও সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।

কোতয়ালী থানার ওসি আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বিটিসি নিউজকে জানান, এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হলে অবশ্যই মামলা গ্রহন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.