দালালদের মাধ্যমে আবারও মিরসরাই উপকূল-শিল্পনগর দিয়ে পালিয়ে আসছে ভাসানচরের রোহিঙ্গারা

বিশেষ প্রতিনিধি: নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যেতে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর এলাকা। শিল্পনগর অঞ্চল থেকে মহাসড়ক কাছে হওয়ায় এ রুটটি দালালদের জন্য সহজ রুট। আর এ রুটকে কাজে লাগিয়ে দালালরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যেতে সাহায্যে করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২০২০ সালের শেষের দিকে ভাসানচরে চার দফায় প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তর করা হয়। ২০২১ সালের ৩০ মে থেকে চলতি মাসের ৮ জুলাই পর্যন্ত ৯৩ জন রোহিঙ্গা দালাল চক্রের মাধ্যমে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে সাগরপথে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে মিরসরাই উপকূল এলাকা ও শিল্পনগর অঞ্চলে পালিয়ে এসেছে।
সর্বশেষ চলতি মাসের ৮ জুলাই ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় নারী-শিশুসহ ২২ রোহিঙ্গাকে আটক করে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও আনসার সদস্যরা।
তারা হলো- জাফর আহম্মদের স্ত্রী হালিমা খাতুন (২৭), তার ছেলে মিজান (৮ মাস), মো. সালামের মেয়ে ফাতেমা (১৩), মো. আক্তারের মেয়ে মোস্তাকিমা (২০), আবু বক্করের স্ত্রী সানজিদা (২১), মো. মাহমুদের ছেলে আবু বক্কর (২৫), আবু বক্করের মেয়ে ইসমত আরা (৩), শওকত আরা (৫), আহমদ খানের ছেলে সালামত খান (২১), রশিদের ছেলে শওকত উল্লাহ (২২), শওকত উল্লাহর ছেলে ইমান শরীফ (৬ মাস), হাসান শরীফ (৬), মাহমুদের স্ত্রী দজুমা খাতুন (১৮), আবু শরীফের স্ত্রী শাহীনা (১৯), তার ছেলে আব্রাহাম খান জয় (১) ও সুলতান আহমদের ছেলে আরিফ উল্লাহ (২১)। একইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭-টায় একই স্থান থেকে আরও ০৬ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) তানভীর আহম্মেদ বিটিসি নিউজকে বলেন, ৮ জুলাই দুপুরে ও সন্ধ্যায় নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে দালালকে টাকা দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। দালালরা তাদেকে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সুপারডাইক এলাকায় নামিয়ে পালিয়ে যায়।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, উন্নত বাসস্থান ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সত্ত্বেও ভাসানচরে তাদের ভালো লাগছিল না। তাদের কারও বাবা-মা, কারও ভাইবোন, কারও ছেলেমেয়ে উখিয়ায় রয়েছে আর তারা ভাসানচরে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজন ছাড়া ভাসানচরে থাকা তাদের জন্য কষ্টকর। তাই তারা কুতুপালংয়ের উদ্দেশ্যে দালালচক্রের মাধ্যমে পলিয়ে এসেছে।
প্রশাসনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রথমধাপে ৩১ মে তিন দালালসহ ১০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ২২ জুন ১৪ জন, তৃতীয় ধাপে ১১ জুলাই ১৮ জন, চতুর্থ ধাপে ২০ জন এবং ৯ সেপ্টেম্বর ৯ জন, চলতি বছরের ৮ জুলাই ২২ রোহিঙ্গাকে মিরসরাই উপকূল থেকে আটক করেন মিরসরাই, জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ ও শিল্পনগরে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর নামে ৩১ হাজার একর জায়গাজুড়ে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীর সোনাগাজীতে। এ শিল্পনগরের সিংহভাগ জায়গা মিরসরাই উপজেলায় হওয়ায় মূল উন্নয়নকাজ চলছে এখানে। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, বাঁধনির্মাণ ও মাটিভরাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির কাজ করছেন দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক। স্বল্পমজুরিতে কাজ করানো যায় বলে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদারদের মাধ্যমে এই শিল্পাঞ্চলে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গা শ্রমিকরাও।
এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর হোসেন মামুন বিটিসি নিউজকে বলেন, দালালরা বিভিন্ন এলাকার। তাদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। আটক রোহিঙ্গারা দালালদের নাম বলতে পারছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে নোয়াখালী, কক্সবাজার, টেকনাফের দালালদের যোগসাজশে ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। এর পেছনে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশ।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, রোহিঙ্গারা মূলত কুতুপালংয়ে থাকা তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের কাছে যাওয়ার জন্য পালিয়ে আসে। ভাসানচর থেকে সবচেয়ে সহজরুট মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহাসড়কও কাছে। আমাদের টহল টিম সজাগ থাকায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আটক করতে সক্ষম হচ্ছে।
মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের দায়িত্বরত আনসার কমান্ডার জাহাঙ্গীর হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, ভাসানচর থেকে সাগরপথে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এ স্বল্পপথ ট্রলারে পাড়ি দেওয়া খুবই সহজ। আর এখানকার কিছু অংশ ঘনজঙ্গল। দালালদের মাধ্যমে গোপনে এখানে চলে আসা তারা। আমরা সবসময় টহল দিচ্ছি।
ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকার কর্তৃক নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বিটিসি নিউজকে বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টা পুরো এলাকা নজরদারিতে রাখছি। যেহেতু ভাসানচর উন্মুক্ত সেক্ষেত্রে আমরা তাদের চলাফেরাতে বাধা দিতে পারি না। কেউ মাছ ধরার নাম করে কেউ বাজার করার নামে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.