দাবি বাস্তবায়ন হয়নি, আজ শেষ হচ্ছে পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘট ও অবরোধ

খুলনা ব্যুরো: নয় দফার মধ্যে এক দফা বাস্তবায়নের উদ্যোগ ছাড়া কার্যত কোন দাবিই পূরণ হয়নি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের। এজন্য খুলনা-যশোর অঞ্চল ছাড়াও দেশব্যাপী ২৬টি পাটকলের তিন দিনের ধর্মঘট এবং প্রতিদিন চার ঘন্টার রাজপথ-রেলপথ অবরোধ আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে। খুলনায় প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের মধ্যেই গতকাল বুধবার রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করায় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনার সাথে দেশের সকল স্থানের রেল যোগাযোগ যেমন বন্ধ থাকে তেমনি নগরীর নতুন রাস্তা ও আটরা শিল্প এলাকা এবং যশোরের রাজঘাট থেকে বিশেষ করে খুলনা-যশোর মহাসড়কের সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। অবরোধ চলাকালে এ তিনটি স্থানেই পাটকল শ্রমিকরা অবস্থানের পাশাপাশি রাস্তায় ও রেলপথের ওপর আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করে।

পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরী-বেতন পরিশোধ, ২০১৫ সালের জাতীয় মজুরী ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকরীচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পূর্নবহাল, সকল মিলে সেটআপের অনুকুলে শ্রমিক-কর্মচারীদের শুন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ ও স্থায়ীসহ ৯ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত বুধবার সকাল থেকে নগরীর নতুন রাস্তা, আটরা শিল্প এলাকা এবং যশোরের রাজবাধে শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকে। আগের দিনের মত পাটকলের উৎপাদনও বন্ধ ছিল। খালিশপুরের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর(সাবেক পিপলস), দৌলতপুর, দিঘলিয়ার ষ্টার, আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইষ্টার্ণ ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই, কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা এ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে।

খালিশপুরের প্লাটিনাম, ক্রিসেন্ট, খালিশপুর, দৌলতপুর ও দিঘলিয়ার ষ্টার জুট মিলের শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে নতুন রাস্তা মোড়ের খুলনা-যশোর মহাসড়কে অবস্থান করে। আটরা শিল্প এলাকার আলীম ও ইষ্টার্ণের শ্রমিকরা আলীম গেট, নওয়াপাড়ার জেজেআই ও কার্পেটিং মিলের শ্রমিকরা জেজেআই গেটের খুলনা-যশোর মহাসড়কে সমবেত হয়। এ সময় খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ে, আটরা শিল্প এলাকার আলীম গেট ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই গেটের মহাসড়কে এবং রেললাইনের উপর বসে অবরোধ কর্মসূচী পালন করে প্রায় অর্ধলক্ষ শ্রমিক। পাওনার দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক ও রেললাইনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের সকল যান ও রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে নতুন রাস্তা, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। এ কর্মসূচী চলাকালে নতুন রাস্তা, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহবায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএ’র সভাপতি মোঃ মুরাদ হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দীন। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা মোঃ সোহরাব হোসেন, সাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির খান, মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, শেখ মোঃ ইব্রাহীম, মোঃ বেল্লাল মল্লিক, আঃ মান্নান, পাটকল শ্রমিকলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান, সেলিম আকন, কাওসার আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম শিকদার, আবু জাফর, এস এম আজম, আবু হানিফ, আব্দুল মজিদ বকুল, মোঃ সেলিম শিকদার, সরদার আলী আহম্মেদ, মোঃ সাহিদুল ইসলাম সাহিদ, আইয়ুব আলী, বেলায়েত হোসেন ও আবু হানিফ।

আটরা শিল্প এলাকার শ্রমিক সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিঠু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা আঃ হামিদ সরদার, ইষ্টার্ণ সিবিএ সভাপতি মোঃ আলাউদ্দীন, সাধারন সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন, শ্রমিক নেতা আঃ সালাম, আঃ রশীদ, মুজিবর রহমান, মকবুল হোসেন, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিয়াকত হোসেন প্রমুখ। নওয়াপাড়া শিল্প এলকার রাজঘাটের শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান, মোঃ মজিবর রহমান, জাহিদুল ইসলাম।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাট মৌসুম শেষ হলেও অর্থাভাবে পাট ক্রয় না করায় মিলগুলো বন্ধ এবং শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া কখনোই দাবি বাস্তবায়ন হবে না। রাজপথে লড়াই করে এ দাবি আদায় করে নিতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে শ্রমিক আন্দোলন চলবে বলেও জানান তারা। এছাড়া শ্রমিক-কর্মচারীদের সকল পাওনা পরিশোধের জন্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান শ্রমিক নেতারা।

খুলনা-যশোর অঞ্চল ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য স্থানের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলেও একই আন্দোলন কর্মসূচী চলছে। আজ বৃহস্পতিবার এ কর্মসূচী শেষ হলেও আগামী ৭ এপ্রিল ঢাকায় পাটকল শ্রমিক লীগ ও সিবিএ-নন সিবিএ নেতৃবৃন্দের বৈঠক থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে পাটকল শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন। তবে আগামী শনিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিক নেতাদের সাথে বসতে পারেন বলেও একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে, খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন মঙ্গলবার প্রশাসন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের নিয়ে বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন যে, রাজপথে নামলেই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার ওই কঠোরতার মধ্যেই শ্রমিকরা বুধবারও রাজপথ-রেলপথ অবরোধ পালন করেছে। আজও যথারীতি তারা ধর্মঘট পালনের পাশাপাশি চার ঘন্টা অবরোধের জন্য অনড় রয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.