দক্ষিণ অঞ্চলের প্রখ্যাত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক কবিরাজ হোসেন মোল্লা আর নেই

উজিরপুর প্রতিনিধি:‘মৃত্যুর পরেও যদি মানুষের উপকার করা যায়, কবর না দিয়ে মোরে পাঠিয়ে দিও চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়’’-সেই দক্ষিণ অঞ্চলের বিশিষ্ট আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক সাদা মনের মানুষ বহু খেতাবপ্রাপ্ত কবিরাজ হোসেন মোল্লা (৯৭) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে…….রাজেউন)
মৃত্যুকালে ২ ছেলে ৪ মেয়ে ও ৩ স্ত্রীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৭টায় জয়শ্রী বাসস্টান্ড সংলগ্ন নিজ প্রতিষ্ঠিত দাওয়াখানায় মারা যান।
সকাল ১০টায় প্রথম জানাজা নামাজ জয়শ্রীতে শেষ করে বাদ যোহর তার নিজ বাড়ি উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ কালিহাতা গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরে কবিরাজ হোসেন মোল্লা নিজের দেহটাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে সন্ধানী ক্লাবে দান করেছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়।
তবে বর্তমানে মহামারী করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন কারণে পরিবারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের মৌখিক অনুমতি দেন শেবাচিম কর্তৃপক্ষ।
তার ভক্ত অনুসারীদের মাধ্যমে জানা যায়, ১৯৫২ সালে প্রথেেম সিলেট শহরে বরিশালের ৩ বন্ধুকে নিয়ে ভারতের কোলকাতা, বালিগঞ্জ কোম্পানীর আয়ুর্বেদিক মহাশংকর তৈল বিক্রয় শুরু করেন। স্বাধীনতার পরের বরিশাল শহরে এসে ওই তিনবন্ধু মিলে নিজেদের কোম্পানীর মাধ্যমে মহাশংকর তৈল ও দাঁতের মাজন তৈরী করে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, গলাচিপাসহ বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত শুরু করেন।
১৯৮০ সালের দিকে কবিরাজ হোসেন মোল্লা বিভিন্ন দেশীয় গাছ গাছড়া ও ধাতু দিয়ে তার নিজ নামে কোম্পানী তৈরী করে বাবুগঞ্জের দোয়ারিকা ফেরিঘাটে কোম্পানীর কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় তিনি মহাশংকর তৈল, দাঁতের মাজন, ছাল বাকল, কোবরা বাম, নিমতা বাম, বোনাজী পিল, ফেরোজা মলম, ফেরোজা ফ্যাক্স, সুগন্ধী আগরবাতি গোলাপজল সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরী করে বাজারজাত করেন এবং তিনি নিজেই অত্যন্ত সুমিষ্ট ভাষায় গাড়িতে গাড়িতে উঠে তার পণ্য বিক্রয়ের ক্যানভাস করতেন।
পরে এ বাজারজাতকরণের প্রধান হাতিয়ার ছিল এলাকার অসহায় অন্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরা। তারা তৎকালীন উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ফেরীঘাটে বিভিন্ন গাড়িতে গাড়িতে ক্যানভাসের মধ্যেমে বিক্রি করতেন। তার এ কোম্পানীর মাধ্যমে হাজার হাজার অন্ধ অসহায় পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
তার জীবনের বড় শখ ছিল কবিরাজ হোসেন মোল্লা ইউনানী এন্ড আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও গবেষনাগার প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে জয়শ্রী বাসস্টান্ডে ৫তলা বিশিষ্ট ভবন তৈরী করে নিজের দাওয়াখানায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন বছরের পর বছর।
তার চিকিৎসা জীবনে স্বর্ণ, রৌপ্য ব্রোঞ্জ, মাদার তেরেসা, স্বাধীনতা স্বর্ণপদকসহ অসংখ্য পদকে ভ‚ষিত হয়েছেন। এমনকি বিবিসি সংবাদ মাধ্যমেও তাকে নিয়ে লাইফ সম্প্রচারিত হয়েছে। তিনি ৪ ভাই ৫ বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। তার দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন গৌরনদী উপজেলার কাসেমাবাদের অন্ধ লোকমান হোসেন (৬০)।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তারমত অসংখ্য অন্ধ এই কবিরাজ হোসেন মোল্লার জন্য স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপন করছে। হোসেন মোল্লার ছেলে আসাদুজ্জামান রিপন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তার পিতা একজন পরোপকারী ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে দক্ষিণ অঞ্চলের আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী জগতের অভিভাবককে হারিয়েছি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর উজিরপুর প্রতিনিধি আঃ রহিম সরদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.