ত্রিপুরার থানায় পুলিশের সঙ্গে বাকযুদ্ধ, উত্তেজিত অভিষেক

(ত্রিপুরার থানায় পুলিশের সঙ্গে বাকযুদ্ধ উত্তেজিত অভিষেক–ছবি: প্রতিনিধির)
কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: আদালত থেকে জামিন পেলেন ত্রিপুরায় ধৃত তৃণমূলের ১৪ জন যুব নেতানেত্রী। আজ রবিবার (০৮ আগস্ট) ভোর রাতে খোয়াই থানার সামনে কোভিড বিধি অমান্য করে অবস্থান আন্দোলন করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
খবর পেয়ে  সদলবলে আজ সকালেই কলকাতা থেকে আগরতলা উড়ে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ৮জন আইনজীবীও। খোয়াই থানায় পৌঁছে তিনি ধৃতদের মুক্তির দাবি জানালে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কি বেঁধে যায়। বাইরে শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক উত্তেজনা। পরে  ধৃতদের আদালতে পেশ করা হলে তাঁদের হয়ে সওয়াল করেন ১২ জন আইনজীবী। বিজেপি এবং তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় আদালত চত্বরেও। অবশেষে জামিন পান ১৪ জনই।

আসলে রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের জন্য ত্রিপুরায় নিজেদের পরিকল্পনার পথে সফলভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। একেবারে শূন্য থেকে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্যে কার্যত প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। অন্তত রাজনৈতিক আবেগের বিচারে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে অবশ্য,তৃণমূলের এই দ্রুত উত্থানের নেপথ্যে আসলে শাসক বিজেপি-রই ভুল আচরণ, ভুল চাল। অনেকে আবার মনে করছেন, তৃণমূলেরই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের নির্বাচনী ভবিষ্যতকে অন্ধকারের মুখে ঠেলে দিচ্ছে গেরুয়া শিবিরেরই একাংশ। কেন?

প্রথমত, তৃণমূল প্রমাণ করতে  চেয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে শাসকদল হিসেবে তারা বিরোধীদের ওপরে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে গলা ফাটাচ্ছে যে বিজেপি, সেই বিজেপিই ত্রিপুরায় শাসন ক্ষমতায় থেকে অত্যাচার চালাচ্ছে বিরোধী তৃণমূলের ওপরে। গত ক’দিনের ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে সেটাই। একইসঙ্গে তৃণমূলের লক্ষ্য, ত্রিপুরায়  বিজেপি বিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে দ্রুত নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। ঘটনাপ্রবাহ সেদিকেই নিয়ে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে। আগামীকাল সোমবার (০৯ আগস্ট) ত্রিপুরা ইস্যু নিয়ে তৃণমূল সরব হতে চলেছে সংসদের আঙিনায়।
গতকাল শনিবার (-৭ আগস্ট) এবং আজ রবিবার (০৮ আগস্ট)  ত্রিপুরার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পুলিশের হাতে ধৃত দলের যুবনেতা-নেত্রীদের ছাড়াতে কলকাতা থেকে আজ সাতসকালেই ত্রিপুরায় ছুটে যেতে হয় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। খোয়াই থানায় তিনি পৌঁছানো মাত্রই বাইরে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করে দেন বিজেপি কর্মীরা। ভেতরে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হন অভিষেক নিজে এবং তাঁর সঙ্গে কলকাতা থেকে যাওয়া বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু,সাংসদ দোলা সেন এবং তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল  ঘোষ।
তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, বাংলা থেকে ত্রিপুরায় দলের কাজে গিয়ে যে ৩ যুব তৃণমূল নেতানেত্রী গতকাল শনিবার বিজেপি সমর্থকদের হামলার শিকার হলেন, তাঁদেরই পুলিশ গ্রেফতার করলো কোন যুক্তিতে? অথচ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন? কোভিড বিধি অমান্যের অভিযোগে যদি থানার সামনে অবস্থানে বসা ১৪ তৃণমূল নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়, তা হলে কোভিড বিধি ভেঙে থানার সামনে বিক্ষোভরত বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন?
গতকাল শনিবার আক্রান্ত হন ঘাসফুল শিবিরের ত্রিপুরা সফররত ৩ যুবনেতা-নেত্রী দেবাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহা এবং জয়া দত্ত। গেরুয়া শিবির অস্বীকার করলেও অভিযোগের আঙুল বিজেপির  দিকেই। হামলার প্রতিবাদে খোয়াই থানার সামনে অবস্থান শুরু করেন আহত ৩ নেতানেত্রী। সঙ্গে ১১ জন।
আজ রবিবার ভোররাতে কোভিড বিধি ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। খবর পাওয়া মাত্রই কলকাতা থেকে আগরতলায় উড়ে যান অভিষেক। বিমান থেকে নেমেই সোজা খোয়াই থানায়। আগরতলায় নেমেই এক হাত নেন বিজেপিকে। তাঁর মন্তব্য, ‘ত্রিপুরাকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত করেছে বিজেপি।
বিপ্লব দেব ভাবছেন,তাঁর কাছ থেকে ভিসা নিয়ে তবেই ত্রিপুরায় পা রাখতে পারবেন বিরোধীরা। যাঁরা বড় বড় ভাষণ দেন , গণতন্ত্রের কথা বলেন, তাঁদের হাতে ত্রিপুরার কী অবস্থা রাজ্যবাসী তা দেখছেন। যাঁরা এঁদের চ্যালেঞ্জ করছেন, তাঁদের ধরে ধরে জেলে ঢোকানো হচ্ছে।’ অভিষেকের মতে, জনতার রায়ে ক্ষমতা হারাবেন বিপ্লব দেব।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতে, এসবই তৃণমূলের নাটক। আসামেও একই নাটক করতে গিয়েছিল তারা। পঞ্চায়েতের একটা আসনও জোটাতে পারেনি তৃণমূল। এদিকে আবারও খবর এসেছে, তৃণমূলের নেতা এবং আইনজীবীদের গাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে।
যাইহোক এটা ঘটনা, আইপ্যাকের ২৩ জন সমীক্ষককে  আগরতলায় আটকে রাখা থেকে শুরু করে গত ২ আগস্ট তাঁর প্রথম ত্রিপুরা সফরে মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার পথে অভিষেকের ওপরে হামলা এবং গতকাল ও আজকের ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু তৃণমূলের পালেই হাওয়া তুলছে বিজেপি-শাসিত ত্রিপুরায়। বিজেপিকে কোনঠাসা করার অস্ত্র তুলে দিচ্ছে তৃণমূলের কৌশলীদের হাতে। চালে বোধহয় ভুল করছে গেরুয়া শিবির। পর্যবেক্ষণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.