তুরস্কের মারমারা সাগর

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তন ও জঞ্জালের কারণে তুরস্কের মারমারা সাগরে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। চারদিকে ভেসে উঠছে কাদার মতো ভাসমান পদার্থ। জেলেরা অতীতে সরাসরি তাজা মাছ সরবরাহ করতেন। কয়েক বছর ধরে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে; দূষণের মাত্রাও যাচ্ছে বেড়ে।
আগে কখনো এমন পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেনি। মারমারা সাগরের একটা বড় অংশ কাদার গালিচায় ঢেকে গেছে। বিশেষ জাহাজ নামিয়ে পাম্প চালিয়ে তা দূর করার চেষ্টা চলছে। কিছু জায়গায় সেই গালিচা ৩০ মিটার পর্যন্ত গভীর।
সামুদ্রিক জীবের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা পদার্থ কয়েক কিলোমিটারজুড়ে পানির ওপর ও নিচের অংশ ঢেকে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি ও শহরের বর্জ্যপদার্থই এজন্য দায়ী। সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের মতে, মারমারা সাগরের প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ওপর আবর্জনার প্রভাব সত্যি মারাত্মক।
সেইসঙ্গে শ্লেষ্মাও যোগ হয়েছে। ফলে প্রবালেরও অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। অথচ প্রবালই পানি ফিল্টার করে সমুদ্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। দুটি প্রণালীর মাধ্যমে এ সাগরটি কৃষ্ণ সাগর ও ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে যুক্ত। মারমারা সাগর প্রায় হ্রদের মতো।
প্রায় ৫০ বছর ধরে আড়াই কোটি মানুষের বর্জ্য সেখানে গিয়ে পড়ছে। জীববিজ্ঞানী মের্ট গ্যোকাল্প জানান, শ্লেষ্মার কারণে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ঘটতে পারে না এবং অক্সিজেনও সৃষ্টি হয় না। শ্লেষ্মার কারণে জেলেরা সমুদ্রে জাল ফেলতে পারছে না।
জাল পানির নিচে নামছে না, নামলেও মাছ ছাড়া অন্যান্য পদার্থে জাল ভরে যাচ্ছে। সে কারণে আলি কসকুন প্রায় ৪০ বছর পর ছিপ দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো মাছ ধরা পড়ছে না। সম্ভবত সবার মতো তাকেও নিজের পেশা পাকাপাকিভাবে ছেড়ে দিতে হবে।
সমুদ্রে সাঁতারের কথাও ভাবা যায় না। কারণ দূষিত গালিচার মধ্যে মানুষের জন্য বিপজ্জনক জীবাণু ও ভাইরাস দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞগণ কলেরার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন। সে কারণে মারমারা সাগরের তীরে বেশ কয়েকটি সৈকত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এককালে সমুদ্রে মাছের অভাব ছিল না, আজ দূষণের কারণে পরিস্থিতি বদলে গেছে।  #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.