তুরস্ক’র “হায়া সোফিয়া”কে মসজিদে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী হায়া সোফিয়া। সুউচ্চ ও দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ এবং অন্যান্য সাধারণ স্থাপত্যের জন্য যা বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। ৫৩৭ সালে নির্মিত হায়া সোফিয়া বাজেন্টাইন সামরাজ্যের অন্যতম স্থাপনা। একে ইতিহাস বদলে দেয়া স্থাপত্যও বলা হয়ে থাকে।

ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা তুরস্কের এই হায়া সোফিয়াকে ফের মসজিদে রূপান্তরিত করা হবে কিনা, তা নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়টি পিছিয়েছে দেশটির আদালত।

গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) ১৭ মিনিটের শুনানি শেষে তুরস্কের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’ ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে রায় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, জানিয়েছে বিবিসি।

বাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ানের আদেশে ষষ্ঠ শতকে হায়া সোফিয়া নির্মিত হয়। এরপর থেকে প্রায় এক হাজার বছর ধরে অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল এটি।
১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলে স্থাপনাটিকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। প্রায় পাঁচশ বছর পর তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট মুস্তফা কামাল আতার্তুক এটিকে মিউজিয়ামে পরিণত করেন।

সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালতের অনুমোদন পেলে তুরস্ক জাদুঘরটিকে আবারও মসজিদে রূপান্তর করার সুযোগ পাবে।

গত বৃহস্পতিবারই তুরস্কের প্রশাসনিক আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কিন্তু শুনানি শেষে এ বিষয়ে বিলম্বের সিদ্ধান্ত নেয় আদালত।

তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান গত বছরের এক নির্বাচনী সমাবেশে হায়া সোফিয়াকে মসজিদে পরিণত করার পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছিলেন।

দেশটির ইসলামপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরেই স্থাপনাটিকে ফের মসজিদে রূপান্তরের দাবী জানালেও ধর্মনিরপেক্ষরা এর বিরোধিতা করে এসেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও হায়া সোফিয়ার রূপ পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের প্রধান এ পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। লাখ লাখ অর্থোডক্স খ্রিস্টান অধ্যুষিত গ্রিস হায়া সোফিয়া জাদুঘরকে নির্দিষ্ট একটি ধর্মের প্রার্থনাকেন্দ্রে পরিণত করার বিরোধিতা করছে।

গ্রিক সংবাদমাধ্যম ‘তা নিয়া’-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনেস্কোর উপপরিচালক আর্নেস্তো ওতোনে রামিরেজ হায়া সোফিয়ার রূপ বদলের ক্ষেত্রে বিস্তৃত অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে বলে মত ব্যক্ত করেছেন।

এ বিষয়ে তুরস্ককে চিঠি দেয়া হলেও তাদের দিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও হায়া সোফিয়াকে আবারও মসজিদে পরিণত করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন দূত স্যাম ব্রাউনব্যাকও তুরস্কের সরকারের প্রতি স্থাপনাটিকে বর্তমান অবস্থায় রেখে দিতেই অনুরোধ করেছেন।

অবশ্য হায়া সোফিয়ার পরিবর্তন নিয়ে অন্য দেশ বা সংস্থার কথা শুনতে নারাজ তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু জানান, ‘আমাদের দেশ এবং আমাদের সম্পত্তি নিয়ে কী করবো, তা আমাদের ব্যাপার।’

বসফরাস প্রণালীর পশ্চিম তীরে ইস্তাম্বুলের ফাতিহ জেলায় অবস্থিত অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপনা হায়া সোফিয়ার নির্মাণকাজ শুরু হয় ৫৩২ সালে; ইস্তাম্বুলের তখনকার নাম ছিল কনস্টানটিনোপল, শহরটি তখন ছিল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.