তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা সাবেক জেনারেলের

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানের পূর্ববর্তী প্রশাসনের অধীনে থাকা সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এক কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি এবং সাবেক অনেক সেনা ও রাজনীতিকরা তালেবানের বিরুদ্ধে নতুন এক যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঈদের পর আগামী মাসেই এ অভিযান শুরু হতে পারে, সে সময়ই তিনি আফগানিস্তানে ফেরারও পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন সাদাত। গত বছরের আগস্টে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই তারা পুরো দেশ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। কাছাকাছি সময়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাটোও তাদের ২০ বছরের সামরিক অভিযান শেষ করে দেশটি ছেড়ে চলে যায়।
নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে প্রথমবার কথা বলা লেফটেনেন্ট জেনারেল সাদাত বলেছেন, আফগানিস্তানকে তালেবানমুক্ত করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে ‘আমাদের শক্তি সীমার মধ্যে যা যা করা দরকার, করব’। ‘যতক্ষণ না আমরা স্বাধীনতা পাই, যতক্ষণ না মতের স্বাধীনতা পাই, আমরা লড়াই চালিয়ে যাব,’ বলেছেন তিনি।
আগের সেনাবাহিনীতে জেনারেলের দায়িত্ব পালন করা সাদাত বলেন, তালেবানরা যেভাবে নারী ও মেয়েদের অধিকারের ওপর কঠোর বিধিনিষেধসহ দেশজুড়ে ফের কট্টর শাসন চাপিয়ে দিচ্ছে তাতে তাদের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা বাতিল করে নতুন অধ্যায় শুরুর এখনই সময়। তিনি আরও বলেন, তালেবানের আট মাসের শাসনে আফগানিস্তানে আমরা যা দেখেছি, তা আরো ধর্মীয় বিধিনিষেধ, ভুল উদ্ধৃতি, ভুল ব্যাখ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনের ভাষ্যের অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।
সাবেক জেনারেল সাদাত বলেন, তালেবান তাদের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনে কি না, এ জন্য শুরুতে তিনি এক বছর সময় দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো আপনি প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে দেখবেন, জনগণকে নির্যাতন, হত্যা, গুমের মতো নতুন কিছু ঘটনা তালেবান ঘটাচ্ছে। এসব বিষয়ে তিনি কী করতে যাচ্ছেন, এ নিয়ে প্রতিদিন আফগানদের কাছ থেকে শত শত বার্তা পাচ্ছেন বলেও দাবি করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
বিবিসি বলছে, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ দেখে দেখে ক্লান্ত আফগানরা নতুন কোনো যুদ্ধে ধকল নিতে চাইবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বছরের পর বছর যুদ্ধ, উদ্বাস্তু হওয়া, তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে টিকে থাকার লড়াই তাদের এমনিতেই ক্লান্ত করে রেখেছে।
আফগানিস্তানের পশ্চিমাপন্থি সরকারের শেষ মাসগুলোতে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হেলমান্দে সরকারি বাহিনীগুলোর দায়িত্বে থাকা সাদাতের বিরুদ্ধেও এমন হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যেগুলোতে বেসামরিকদের প্রাণ গেছে এবং তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
২০২১ সালের আগস্টে তাকে আফগান বিশেষ বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি যেদিন কাবুল নামেন সেদিনই তালেবান রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সাদাতের কমান্ডার-ইন-চিফ আশরাফ গণি দেশ ছেড়ে পালান।
সম্প্রতি সাদাতের একটি অডিও বার্তা গণমাধ্যমে ফাঁসও হয়েছে, যেখানে তাকে আফগানিস্তানকে তালেবানের হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সশস্ত্র যুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে শোনা গেছে। সাদাত সেখানে জানান, তার সঙ্গে আফগানিস্তানের তালেবানবিরোধীদের মধ্যে সুপরিচিত ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স গ্রুপের নেতা আহমদ মাসুদের যোগাযোগ আছে। মাসুদ আফগানিস্তানের কিংবদন্তি কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে।
৩৭ বছর বয়সী সাবেক এ সেনা কমান্ডার বলেন, তার প্রজন্ম আফগানিস্তানের আগের প্রশাসনের ভুলগুলো স্বীকার করে নিচ্ছে, যে প্রশাসনে তিনিও ছিলেন। দুর্নীতিবাজ আফগান রাজনীতিক ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিই তাদেরকে ডুবিয়েছে বলেও মনে করেন সাদাত।
তালেবানের শেষ মাসের আক্রমণের সময় হেলমান্দ প্রদেশে আফগান বাহিনীর নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাদাত। তার বিরুদ্ধে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। (সূত্র: বিবিসি)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.