তদন্তে উঠে এলো অভিনেত্রী হুমায়রার নিঃসঙ্গ শেষ দিনগুলোর চিত্র

বিটিসি বিনোদন ডেস্ক: পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমায়রা আসগর আলীকে ঘিরে সাম্প্রতিক তদন্তে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। এরমধ্যে অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যও প্রকাশ করেছে তদন্তকারী পুলিশ।
জানা যায়, হুমায়রার একাউন্টে ৪ লাখ রুপি ছিল এবং এটিএম লেনদেন থেকে পুলিশের ধারণা, তিনি আর্থিক সঙ্কটে ছিলেন না।
একজন জ্যেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানান, “হুমায়রা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলে মনে হচ্ছে।”
তার ফ্ল্যাট থেকে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে জন্মতারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। তাদের ধারণা, বয়স কম দেখানোর চাপ থেকেই হয়তো হুমায়রা এমনটা করেছিলেন— যেমনটা শোবিজে প্রায়ই হয়ে থাকে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর হুমায়রা অন্তত ১৪ জনকে ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন, যার মধ্যে একজন জনপ্রিয় পরিচালকও আছেন—বর্তমানে তিনি ইসলামাবাদে অবস্থান করছেন। কিন্তু কেউই সাড়া দেননি।
তদন্তে জানা গেছে, তার ফোন, ডায়েরি ও একটি ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাবলেট এখন প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার মোবাইলে মোট ২,২১৫টি কন্টাক্ট থাকলেও কেউই তার শেষ মুহূর্তে পাশে ছিলেন না।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, তিনি হয়তো কাপড় ধোয়ার সময় পিছলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। বাথরুমে ডিটারজেন্টে ভেজা পোশাক পচে গিয়েছিল। রান্নাঘর ছিল একেবারে খালি— যা তার মৃত্যুর আগের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার প্রশ্ন তোলে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন উঠেছে— তার মরদেহ থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধ এতদিন কেন কেউ রিপোর্ট করেনি? নিচতলার বাসিন্দারা অবশ্য বলেছেন, গত নভেম্বরে তারা গন্ধ টের পেয়েছিলেন, কিন্তু ভবনের দারোয়ান তা এড়িয়ে গিয়েছিল।
এদিকে হুমায়রার ভাই নাভিদ আসগর মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে মানতে নারাজ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমার বোন দুর্ঘটনায় মারা যায়নি, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ আমাকে জানিয়েছে, ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙার পর দেখা যায় পেছনের দরজা ও ছাদের জানালাও খোলা ছিল। এ কারণেই দুর্গন্ধ ছড়ায়নি। আমরা ৯০ ভাগ নিশ্চিত— এটি একটি হত্যাকাণ্ড।”
তিনি আরও বলেন, “আমি একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত চাই। বাড়িওয়ালার কললিস্ট ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তার করাচিতে অবস্থানের সময়কাল এবং লাহোরের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।”
নাভিদ হুমায়রার ভ্রমণ- ইতিহাস নিয়েও বিস্তারিত তদন্তের দাবি জানান। “সে একা ভ্রমণ করত না কি কারও সঙ্গে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন।”
তিনি মিডিয়া ও সহকর্মীদের নিরবতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “তার সাম্প্রতিক প্রজেক্টগুলোর অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ঠিকভাবে সহযোগিতা করছেন না। বুঝতে পারছি না তারা কেন চুপ করে আছেন। যদি তারা নির্দোষ হয়, তাহলে সামনে এসে সত্য প্রকাশে সহায়তা করা উচিত।”
৮ জুলাই করাচির ডিফেন্স এলাকায় তার ভাড়া বাসা থেকে অভিনেত্রী হুমায়রা আসগরের নয় মাস পুরনো পচাগলা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই ফ্ল্যাটে একা থাকতেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.