তথ্য গোপন করে বাল্যবিয়ে, অতঃপর যৌতুকের ১০ লাখ টাকা আদায়’সহ ১৫ লাখে কারারক্ষীর চাকরী !

বিশেষ প্রতিনিধি: পূর্ণাঙ্গ তথ্য গোপন রেখে ১৫ লাখ টাকায় দালাল চক্রের মাধ্যমে কারারক্ষী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. সজন হোসেন। সেই চাকরী প্রত্যাশী সজন হোসেন বিয়ে করেছেন চাকরীতে প্রবেশের আগেই। সেটিও করেছেন এক নাবালিকা মেয়েকে। আর কনেপক্ষের কাছ থেকে যৌতুক আদায় করেছেন ১০ লাখ টাকা।
যৌতুকের ১০ লাখ এবং নিজেদের সঞ্চিত ৫ লাখ’সহ মোট ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পেয়েছেন কারারক্ষীর চাকরী। অনুসন্ধানে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত মো. সজন হোসেনের বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা থানার কালিকাপুর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামে। তার পিতার নাম সেলিম হোসেন। চাকরীর আবেদনে সজনের বিডিজেএম নম্বর ১১০৩৮৮।
সূত্র জানায়, বগুড়ার একটি দালাল চক্রের সঙ্গে চাকরীর বিষয়ে ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের চুক্তি হয় সজনের। নিয়োগপত্র পাওয়ার আগে দেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা। আর নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বাকি সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিয়ে চাকরী নিশ্চিত হয় তার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে মান্দার কালিকাপুর ইউনিয়নের কাজী মো. আলমগীরের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ওই এলাকার এক ব্যক্তির নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে খুব গোপনে বিয়ে হয় সজনের। মেয়ে নাবালিকা হওয়ায় জানতে দেয়া হয়নি প্রতিবেশীদেরকেও। অথচ বিধি মোতাবেক, চাকরী প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে।
তবে বিয়ের আগেই সরকারী চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে মেয়ের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সজনের পরিবার। সরকারী চাকুরে জামাই পাওয়ার আশায় রাজিও হয়ে যায় কনেপক্ষ। বিয়ে হয় সজনের এক মামার বাড়িতে, গোপনে রাতের আধারে। শেষ পর্যন্ত যৌতুকের ১০ লাখ এবং নিজেদের ৫ লাখ টাকায় বগুড়ার একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে চাকরী জোটে তার। যদিও লিখিত পরীক্ষায় সকল প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এবং মৌখিক পরীক্ষায় নিজের নাম ও বাবার নাম বলেই কাকতালীয়ভাবে পাশ করেছেন তিনি। নিয়ম ভেঙ্গে ও টাকার বিনিময়ে পাওয়া নিয়োগে তাকে আগামী ১ জুন বিভাগীয় কারা মহাপরিদর্শকের কাছে নিয়োগপত্র ও প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
কারারক্ষী নিয়োগে টাকা লেনদেনের বিষয়টি মো. সজন হোসেন নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল সরকারী একটা চাকরী করব। এ যুগে তো আর টাকা ছাড়া চাকরী হয় না। তাই বাধ্য হয়ে টাকার বিনিময়ে চাকরী নিতে হয়েছে। তবে এত টাকা তো আর আমার পক্ষে জোটানো সম্ভব ছিল না। তাই বিয়ে করে মেয়েপক্ষের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছি এবং নিজেরা ৫ লাখ জোগাড় করে মোট ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরীটা নিয়েছি।
এ ব্যাপারে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, কোনো বিবাহিত ব্যক্তি চাকরীতে প্রবেশের নিয়ম নেই। আর অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বা অসদুপায় অবলম্বন করে চাকরীতে নিয়োগের তো প্রশ্নই আসে না। এমন অনিয়মের কোনো তথ্যপ্রমাণ পেলে অবশ্যই তৎক্ষনাৎ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে টাকা লেনদেনের একটি ফোনালাপ নিয়ে চলতি বছরের গত ০৪ মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেখানে উঠে আসে দালালচক্রের কর্মকান্ডের মাধ্যমে চাকরী পাওয়ার বিভিন্ন তথ্য। আর তারও আগে ১৯ এপ্রিল রাতে রাজশাহীর বায়া এলাকা থেকে অবৈধভাবে চাকরী দেয়ার নামে টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করে আরএমপির গোয়েন্দা বিভাগের একটি টিম।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.