ড্রয়ে শেষ সিটি-আর্সেনালের তুমুল উত্তেজনার মহারণ

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: পুরো একটি অর্ধ ১০ জন নিয়ে খেলেও ম্যানচেস্টার সিটির আক্রমণের জোয়ার সামাল দিল আর্সেনাল। নিজেদের ডি-বক্সের আশেপাশে দীর্ঘ সময় ২০ খেলোয়াড়ের উপস্থিতির পরও চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় তারা জাগাল দারুণ এক জয়ের আশা। কিন্তু অন্তিম সময়ে তাদের হৃদয় ভেঙে দিলেন জন স্টোনস। খুব কাছ থেকে জাল খুঁজে নিয়ে তিনি ধরে রাখলেন ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের অজেয় যাত্রা।
ইতিহাদ স্টেডিয়ামে রোববারের মহারণ শেষ হয়েছে ২-২ সমতায়।
আর্লিং হলান্ডের গোলে শুরুতেই এগিয়ে যায় সিটি। রিকার্দো কালাফিওরি সমতা ফেরানোর পর গাব্রিয়েল মাগালিয়াইসের গোলে এগিয়ে যায় আর্সেনাল। যোগ করা সময়ের অষ্টম মিনিটে জটলা থেকে গোলে সমতা টানেন ডিফেন্ডার স্টোনস।
চোট পেয়ে ২০তম মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি মাঠে ছাড়লে কিছুটা ছন্দ হারায় সিটি। প্রথমার্ধের অন্তিম সময়ে লেয়ান্দ্রো ত্রোসার দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখলে বাকি সময় পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে আর্সেনাল।
প্রায় ৭৮ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ৩৩টি শট নেয় সিটি, এর ১১টি ছিল লক্ষ্যে। আর্সেনাল নিতে পারে কেবল পাঁচ শট, এর তিনটি ছিল লক্ষ্যে।
ঘরের মাঠে আত্মবিশ্বাসী শুরু করে সিটি উপহার দেয় সহজাত আক্রমণাত্মক ফুটবল। শুরুতে নিজেদের একটু গুটিয়েই রাখে আর্সেনাল।
অষ্টম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় সিটি। বেশ ভালো জায়গা থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ইলকাই গিন্দোয়ান।
দুই মিনিট পরেই এগিয়ে যায় ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। সাভিনিয়োর রক্ষণ চেরা পাসে বল স্পর্শ না করে সামনে এগিয়ে যান হলান্ড। আর্সেনালের দুই ডিফেন্ডার প্রাণপণে ছুটেও পাননি তার নাগাল। বিপদ দেখে ছুটে আসা গোলরক্ষক রায়াও করতে পারেননি তেমন কিছু। প্রথম স্পর্শেই জাল খুঁজে নেন হলান্ড।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সিটির হয়ে ১০৫ ম্যাচে ১০০ গোল করলেন ২৪ বছর বয়সী তারকা। এক ইউরোপিয়ান ক্লাবের হয়ে দ্রুততম শত গোলের রেকর্ডটি গড়েছিলেন রোনালদো, ২০১১ সালে রেয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে ঠিক ১০৫ ম্যাচে।
এছাড়া নিজেরই এক রেকর্ড নতুন করে লিখলেন হলান্ড। প্রিমিয়ার লিগে এক আসরে দ্রুততম ১০ গোল করলেন ৫ ম্যাচে। ৬ ম্যাচে ১০ গোল করে আগের রেকর্ড সাবেক ফরোয়ার্ড মিকি কোয়েনের সঙ্গে যৌথভাবে ছিল তার।
পঞ্চদশ মিনিটে অনায়াসে দ্বিগুণ হতে পারত ব্যবধান। গিন্দোয়ানের গতিময় ফ্রি কিক ব্যর্থ হয় পোস্ট কাঁপিয়ে।
পাঁচ মিনিট পর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়েন রদ্রি। ম্যাচ শুরুর ১০ সেকেন্ডের মাথায় কাই হাভার্টজের সঙ্গে সংঘর্ষে চোট পেয়েছিলেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। সেই দফায় খেলা চালিয়ে যান, পরে আবার চোট পেলে আর খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি।
এরপর পাল্টে যায় খেলার চিত্র। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দারুণ জমে ওঠে ম্যাচ।
২২তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে চমৎকার বাঁকানো শটে জাল খুঁজে নেন লাফিওরি। চলতি মৌসুমেই বোলোনিয়া থেকে আর্সেনালে যোগ দেওয়া ইতালিয়ান ডিফেন্ডারের এটাই দলের হয়ে প্রথম গোল।
৪৫তম মিনিটে বুকায়ো সাকার কর্নারে একটুর জন্য জালের দেখা পাননি মাগালিয়াইস। পরের মিনিটে একই রকম আরেকটি কর্নারে ছুটে গিয়ে জাল খুঁজে নেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। এগিয়ে যায় আর্সেনাল।
প্রথমার্ধের নাটকীয়তার তখনও বাকি। ছয় মিনিট যোগ করা সময়ের অন্তিম সময়ে অহেতুক ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ত্রোসার। ১০ জনের দলে পরিণত হয় আর্সেনাল।
বিরতির পর রক্ষণে নিজেদের গুটিয়ে নেয় সফরকারীরা। সুযোগ পেয়ে আক্রমণের বন্যায় যেন তাদের ভাসিয়ে নিতে চায় সিটি।
৫৬তম মিনিটে কাইল ওয়াকারের তীব্র গতির শট ঠেকান রায়া। তিন মিনিট পর ব্যর্থ করে দেন হলান্ডের হেড।
আর্সেনালের রক্ষণের আশেপাশে ২০ জন খেলোয়াড়ের উপস্থিতিতে জায়গা বের করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে গিন্দোয়ান-হলান্ডদের জন্য। চোট পাওয়া কেভিন ডে ব্রুইনের অভাব এই সময়ে খুব ভালোভাবেই টের পায় তারা।
৬২তম মিনিটে ইয়োশকো ভার্দিওলের জোরাল শট পা দিয়ে কোনোমতে আটকে দিয়ে পরে নিয়ন্ত্রণে নেন আর্সেনাল গোলরক্ষক। হতাশা বাড়ে সিটির।
৮৭তম মিনিটে দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে ক্রোয়াট ডিফেন্ডার ভার্দিওলের গতিময় শট ঠেকান রায়া। ধরে রাখেন ব্যবধান।
সিটির একের পর এক শট হয় ঠেকিয়ে দিচ্ছিলেন রায়া, নয়তো জটলা থেকে ব্লক করছিলেন কেউ। মনে হচ্ছিল ২০১৫ সালের পর সিটির মাঠ থেকে প্রথম জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বে আর্সেনাল।
কিন্তু অন্তিম সময়ে জটলায় আলগা বল পেয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন স্টোনস। বলের লাইনেই ছিলেন রায়া। বল তার শরীরে লেগেও জড়ায় জালে।
প্রিমিয়ার লিগে টানা ২৮ ম্যাচ ধরে অপরাজিত থাকল সিটি। ৫ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গুয়ার্দিওলার দল ধরে রাখল শীর্ষ স্থান।
১২ পয়েন্ট করে নিয়ে পরের দুটি স্থানে আছে যথাক্রমে লিভারপুল ও অ্যাস্টন ভিলা।
১১ পয়েন্ট নিয়ে চারে উঠে এসেছে মিকেল আর্তেতার দল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.