ডুমুরিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর ঈদ পুনর্মিলনী : নতুন আবহে ঈদ উদযাপন

খুলনা ব্যুরো: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, “নতুন স্বাধীনতার পর এবারের ঈদ নতুন এক আবহে উদযাপিত হয়েছে।
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ মানুষের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই দুঃশাসনের অবসান হওয়ায় এবার ঈদ সত্যিকারের স্বস্তি ও আনন্দের উপলক্ষ হয়ে উঠেছে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী জুলুমের অবসানে যারা রক্ত দিয়েছেন, আমরা তাদের শহীদ হিসেবে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এবং আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আইনের শাসন কায়েম করা জরুরি। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
বুধবার (২ এপ্রিল) খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বানিয়াখালী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি আরও বলেন, “কোনো ষড়যন্ত্র জামায়াতের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ, জামায়াত তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ থাকবে না। মেজরিটি-মাইনরিটি বলে কোনো পার্থক্য থাকবে না। আমরা সবাই একসঙ্গে বসবাস করব ন্যায়বিচার ও মানবিকতার ভিত্তিতে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এডভোকেট আবুল খায়ের, আর পরিচালনা করেন হারুনুর রশিদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান ও  সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইন,নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান,সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, ড. একরাম উদ্দিন সুমন, সরদার আব্দুল ওয়াদুদ, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হাকিম, এস এম মাহবুবুর রহমান
ঢাকায় ঈদ পুনর্মিলনী: জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
ঈদ উল ফিতরের পরের দিন (১ এপ্রিল) ঢাকাস্থ ডুমুরিয়া-ফুলতলা কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে সরকারি শাহপুর মধুগ্রাম কলেজ অডিটরিয়ামে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি সরদার আব্দুল ওয়াদুদ এবং পরিচালনা করেন জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আজ সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো জাতীয় স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এক মহা জাতীয় ঐক্য গঠন করা। ব্যক্তি বা দল বড় হতে পারে না, সবার ঊর্ধ্বে থাকবে বাংলাদেশ ও তার জনগণ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন,খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম,অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস,  অধ্যক্ষ গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম,  অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, হাফেজ আমিনুল ইসলাম, আশরাফুল আলম, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি ইউসুফ ফকির, পরিষদের সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম আল ফয়সাল।
ঈদ পুনর্মিলনীতে বিভিন্ন পর্যায়ের অংশগ্রহণ
এছাড়া, একই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় শাহপুর ভ্যাটার্নিটি কলেজে এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ডুমুরিয়া উপজেলা অডিটোরিয়ামে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “ঐক্যই শক্তি, ঐক্যই মুক্তি, এবং ঐক্যই আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে মাথা নত না করে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। এজন্য সব রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশকে আল্লাহ জালিমদের কবল থেকে মুক্ত করেছেন। আমরা প্রার্থনা করি, ফিলিস্তিনকেও যেন আল্লাহ জালিমদের হামলা থেকে রক্ষা করেন।”
জামায়াতের কর্মীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের বাকি ১১ মাস পরিচালিত করতে হবে। তাকওয়া ও নৈতিকতা-ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে জামায়াত কর্মীদের নিরলস পরিশ্রম করতে হবে। মানবিক মূল্যবোধে গড়া এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে মায়া, মমতা ও ভালোবাসা নিয়ে কাজ করতে হবে।”
এদিকে ৩১ মার্চ (সোমবার) সকাল ৮টায় খুলনার শিরোমণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ঈদ উল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। পরে তিনি এলাকাবাসীর সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সকাল ১০ টার দিকে তিনি খুলনার সরকারি বিএল কলেজের সাবেক জি এস শহীদ মুন্সী আব্দুল হালিমের বাসভবনে যান।
এ সময় তিনি শহীদের পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়  ও শহীদ আব্দুল হালিমের কবর জিয়ারত করেন।
এ সময় তার সাথে ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, সেক্রেটারি রাকিব হাসান, খুলনা জেলা উত্তর সভাপতি ইউসুফ ফকির, জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, শহীদের ছোট ভাই মুন্সী আব্দুল হাফিজ কচি, খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর হাসান মাহমুদ টিটো, সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক ইসরাফিল হোসেন, বিএম সম্পাদক আসিফ বিল্লাহ, ছাত্র অধিকার সম্পাদক ইমরানুল হক, গোলাম মুইজ্জু, খাইরুল বাশার, বিএল কলেজ সভাপতি হযরত আলী, সেক্রেটারি হোসাইন শেখ প্রমুখ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার উপস্থিত সকলকে শহীদ মুন্সী আব্দুল হালিমের আত্মত্যাগ ও কুরবানীকে ইসলামী আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.