টানা লক ডাউনে বিপাকে শ্রমজীবী, লেবার শ্রেণীর লোকজন

নিজস্ব প্রতিবেদক: কবি সুকান্ত বলেছিলেন পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। আসলেও তাই ক্ষুধার জ্বালা যে পাইনি তাকে কখনও বোঝানো যাবে না ক্ষুধার জ্বালা কতটা ভয়ংকর।
কোদাল নিয়ে দাড়িয়ে থাকা এক দিন মজুর  জিজ্ঞাসা করা হয় হোম কোয়ারেন্টেন চলছে আপনি কেন বাইরে? তিনি উত্তর দেন  ক্ষুধায় বড়ো, ভাইরাস দিয়ে কী হবে? আমি ভাইরাস বুঝি না, শুধু বুঝি আমার পরিবারের চারজন সদস্য; তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে হবে। শহরে আইতেছি কিন্তু তেমন কোনো কাজ পাইতেছি না। পাড়া-প্রতিবেশী সাহায্য করছে বলে কোন রকমে পরিবারটা চলে যাচ্ছে। আমি গরীব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। কিন্তু এভাবে আর কতদিন থাকবো বলেন?’
চাপা ক্ষোভ আর আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন উক্ত দিনমজুর । বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর তানোরে প্রতিদিন প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শহরে আসেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু শহর এখন জনশূন্য। চারিদিক যেন খাঁ-খাঁ করছে। তাই কাজ ছাড়াই রোজ খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাকে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে দেশব্যাপী টানা সরকারি ছুটির মধ্যে চলছে অঘোষিত ‘লকডাউন’। সব শ্রেণির লোকজনকে ঘরে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। কোলাহল আর মানুষে ঠাসা মহানগরের এমন রূপ এর আগে আর কখনও এমন দেখেনি কেউ। জনমানবশূন্য শহরে তার দিনমজুর ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের আয়-রোজগার গিয়ে ঠেকেছে একেবারেই শূন্যের কোটায়।
রাজশাহী মহানগরের গোরহাঙ্গা রেলগেইট এলাকা। এখানে রোজ কাক ডাকা ভোরে জড়ো হন শ্রমজীবী মানুষ। আজ শুক্রবার (০৩/০৪/২০২০) সকাল ৬.৩০ ঘটিকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় সংখ্যায় কম হলেও কিছু দিন মজুরকে কাজের আদায় দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সমাজের সব দৃশ্যপট পরিবর্তন হলেও এখন চিত্র ভিন্ন। এখানে করোনা আতঙ্ক নেই। তবে মানুষের সংখ্যা কম থাকায় শ্রমিকের সংখ্যাও কম। জীবন-জীবিকার তাগিদে তবুও সেখানে আসছেন শ্রমজীবী মানুষ।
রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট, বাঘা, পবার পারিলা, দারুশাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু কাজ নেই। মহানগরের লোকজন আগে এখানে এসে শ্রমিক ভাড়া করে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এখন এলাকাটি প্রায় ফাঁকা। এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতেগোনা কয়েকজন শ্রমিকের দেখা মেলে। কিন্তু কাজের সংকটে তাদের খালি হাতেই ফিরে যেতে হয়। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা বলে জানান।
একাধিক শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিম্ন আয়ের মানুষের মাথায় এখন রাজ্যের দুশ্চিন্তা। পেটের জ্বালায় তাদের বাইরে বের হতে হয়। অনেক সময় পুলিশ তাদের অযথা হয়রানি করে। কিন্তু ক্ষুধার তাড়নায় বাড়িতে থাকার কোনো উপায় নেই তাদের। রাজশাহীর রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ফুটপাতের হকার, পরিবহন শ্রমিক ও দোকান কর্মচারী সবারই একই অবস্থা।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.