টানা ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাচ্ছে সিলেট নগর

সিলেট ব্যুরো: টানা ভারী বৃষ্টিপাতে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। সুরমা নদীর পানি ফের বিপৎসীমা ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। এতে নগরের নতুন পুরনো মিলিয়ে ৪২ ওয়ার্ডে প্রায় শতাধিক এলাকা এক রাতের বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
রাস্তাঘাট ডুবে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে সিলেট বিভাগে চিকিৎসা সেবার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, রাত ১০টার দিক থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং প্রায় একটানা সারারাত চলে এ বৃষ্টিপাত।
ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত একাধিকবার সামান্য সময়ের বিরতি দিয়ে টানা চলছে বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের তথ্যমতে, আজ সোমবার (৩ জুন) সকাল ছয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৭ পয়েন্ট ২ মিলিমিটার। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ২৮ মিলিমিটার এবং ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৯ দশমিক ২ মিলিমিটার। এর আগে গতকাল রবিবার সকাল ছয়টা থেকে সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার।
আজ সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৬ মিলিমিটার।
এসব তথ্য বিটিসি নিউজকে নিশ্চিত করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন। তিনি বলেন, ‘সিলেট বিভাগে ভারী বর্ষণের পূর্ভাবাস আগেই দেওয়া ছিল। আজ সোমবার ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ মিলিমিটার।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য মতে, রবিবারের তুলনায় নদ-নদীর পানি ফের বেড়েছে।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার রেকর্ড অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার এবং কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসিদে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে গতকাল রবিবার সন্ধ্যার রিপোর্ট অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে এবং কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একইভাবে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ভারী বর্ষণের পাশাপাশি সুরমা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গতকাল রবিবার দিবাগত রাত থেকে সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, কুশিঘাট, সোবহানীঘাট, যতরপুর, তেরোরতন, সাদারপাড়, শিবগঞ্জ, তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, হাওয়াপাড়া, মীরের ময়দান, সাগরদিঘীর পার, পায়রা, দরগামহল্লা, মুন্সীপাড়া, নাইওরপুল, সোনারপাড়া, বালুচর, কাস্টঘর, পুলিশ লাইনস, কেওয়াপাড়া, খাসদবির, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, লালদিঘীরপার ও মেজরটিলাসহ বিভিন্ন এলাকা ভোরের আগেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।
সিলেট নগরের মনিপুরী রাজবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী বিটিসি নিউজকে রাত সাড়ে তিনটার দিকে বলেন, ‘রাত ১০টা থেকে টানা বৃষ্টিপাতে রবিবার দিবাগত রাত একটার দিকে রাস্তা ডুবে বাসায় পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে বৃষ্টি কিছুসময় কমলে আবার পানি বের হয়ে যায়। কিন্তু রাত তিনটার দিকে ফের বৃষ্টির পানি ঢুকতে শুরু করে। এ যাত্রায় আর রক্ষা নেই টের পাচ্ছি। এখন আর জিনিসপত্র রক্ষার চেষ্টা না করে হাল ছেড়ে দিয়েছি।’
নগরের শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও ওয়েডিং ফটোগ্রাফার ধ্রুব ভট্টাচার্য আক্ষেপ করে বলেন, ‘বন্যার পানির জন্য দীর্ঘদিনের পছন্দের বাসাটি ছেড়ে নতুন বাসায় উঠেছি ২২-এর বন্যার পর। কিন্তু নতুন বাসায় উঠেও স্বস্তি পেলাম না। রাস্তা ডুবে বাড়ির বারান্দার কাছাকাছি পানি। যেকোনো সময় পানি ঢুকে যেতে পারে এই ভয়ে সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছি।’
এদিকে বন্যায় নগরের বিভিন্ন সড়ক ডুবে যাওয়ায় সকাল থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়ে বিদ্যালয়, কর্মস্থল ও জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষ। পানি বেশি থাকায় হেঁটে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে। তার ওপর যানবাহনের অপ্রতুলতা, রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকার কারণে ভোগান্তি নিয়ে দিন শুরু হয় তাদের।
নগরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফাহিম ফেরদৌস বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু জল। এর মধ্যে যানবাহন নেই। প্রচণ্ড বৃষ্টির কতটা আর ছাতায় আটকায়। তাছাড়া নোংরা জল আর বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে অফিসে যাওয়ার পর আর কাজে মন দেওয়ার অবস্থা থাকে না।’
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সিলেট ব্যুরো প্রধান মো. জাকিরুল হোসেন জাকির। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.