সাভার প্রতিনিধি: কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সাভারের আশুলিয়ার শ্রীপুরের দক্ষিণ পাড়া যেন এভাবেই পানিতে ভাসছে। সড়ক পরিণত হয়েছে খালে। পিচ ঢালাই সড়কের ওপরে এখন ছোট নৌকাই যাতায়াতের ভরসা। পাঁচ দিন ধরে এমন দশায় এলাকার অন্তত দুই হাজার মানুষ।
জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে বেশির ভাগ মানুষই ময়লা পানি মাড়িয়ে ভিজে ছুটছে গন্তব্যে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। অনেকে ঈদ শেষে গ্রাম থেকে ফিরে পড়ছে চরম বিপাকে। লড়াই করছে পানির সাথে।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ঢাকামুখী আশুলিয়ার শ্রীপুর দক্ষিণ পাড়ায় ঢুকতেই শাখা সড়কটি পানিতে ডুবে আছে।
এর পেছনে পুরো এলাকাটিতে এখন হাঁটুপানি। কোথাও কোমর পানি। দোকানপাট প্রায় বন্ধ। পানিতে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।
চলাচলে দু-একটি ছোট নৌকা দেখা গেলেও অনেকে ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে। কেউ ঘর থেকে আসবাব বের করছে। কেউ ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে বের হয়ে আসছে। কর্মজীবী মানুষ ভেজা কাপড়েই ছুটছেন কারখানায়।
ঈদের ছুটি শেষে গ্রাম থেকে ফিরে ব্যাগ নিয়ে অনেকে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সড়কের সামনে। জনবহুল এলাকাটি যেন স্থবির হয়ে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাটি সড়ক ও জনপথের মূল ড্রেনে সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তবে টানা বৃষ্টি ও ময়লা-আবর্জনা জমে ড্রেন লাইনটি প্রায় বন্ধ। ফলে ঈদের পরদিন থেকে শুরু হতে থাকে এলাকার জলাবদ্ধতা। স্থানীয়ভাবে ড্রেনটি পরিষ্কার করে নিষ্কাশনের চেষ্টা করলেও তেমন সমাধান মিলছে না। স্থানীয়ভাবে যে ড্রেনটি করা হয়েছে, তা পানি নিষ্কাশনের জন্য অপ্রতুল। আবার প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ভবন।
পানি মাড়িয়ে ভেজা কাপড়ে কারখানা যাওয়ার পথে পোশাক শ্রমিক মানেছা বেগম বলেন, আমাদের খুব কষ্ট। বাসার মোটর নষ্ট হয়ে গেছে। ভেজা কাপড়ে কারখানায় যাই। কী করমু। ঘরে খাওয়ার পানি নাই। টয়লেটেও পানি নাই।
বৃদ্ধা জামেলা খাতুন বলেন, পোলাপান পানিতে পড়ে যায়। আমরা আর পারছি না। আমাদের কী করা যায় একটু দেখেন।
স্থানীয় ওষুধ দোকানি সিদ্দিকুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, আমি গ্রামের বাড়ি থেকে এসে দেখি আমার দোকানের ওষুধ পানিতে ভাসছে। ড্রেন লাইন ছোট, তাই পানি নিষ্কাশন হয় না। বৃষ্টি হলেই বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। প্রতিবছর দু-একবার এ ধরনের সমস্যায় আমাদের পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয় বাড়িওয়ালা কাশেম মিয়া বিটিসি নিউজকে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম অনেক সহযোগিতা করেছেন। কয়েকবার আসছিলেন। ব্যক্তিগতভাবেও ড্রেনের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যেটা ড্রেন হইছে, সেটা দিয়ে কাভার হচ্ছে না। কারণ আশপাশের অফিসের পানি ও ভাদাইল এলাকার পানি এদিক দিয়ে নামে। ফলে ওভার হয়ে আমাদের এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সরকারের কাছে আবদেন, যাতে আমাদের প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বিটিসি নিউজকে বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে জলবাদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে অধিকাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বসবাস। প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এই এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত পানির সাথে লড়াই করছে। মশার উপদ্রব ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিলেও তা যথেষ্ট নয়। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে জনগণকে ভোগান্তি বাঁচাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত ও স্থানীয় উদ্যোগে ড্রেন নির্মাণ করলেও পরিষ্কারের বিষয়টিতে নজর নেই স্থানীয়দের। যদি নজর দিত তাহলে এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হতো না। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত কাজ করা হবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.