ঝুপড়িতে থেকেও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাগাতিপাড়ার ঝুরমান বেওয়ার জমি দান

নাটোর প্রতিনিধি: ডাক নাম তার ঝুরন। কাগজে-কলমে পুরো নাম ঝুরমান বেওয়া। বয়স তেষট্টির কোটায়। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগরের কৈচরপাড়ার মৃত কছিম উদ্দিনের মেয়ে।
এক ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনিই বড়। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর পরই তার বিয়ে হয়েছিল নাটোর সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের হাতেম আলীর সঙ্গে। সুদর্শন হাতেম আলী নিজের সুন্দর চেহারাকে পুঁজি করে একের পর এক বিয়ে করছিলেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই ভেঙে যায় ঝুরমান বেওয়ার সংসার।
সাত মাস বয়সী একমাত্র ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে তার আশ্রয় হয় দরিদ্র বাবার ঘরে। বাবার মৃত্যুর পর অভাবের তাড়নায় তিনি নওগাঁর সান্তাহার থেকে মাটির হাঁড়ি-পাতিল ও মাদুর কিনে এনে এলাকায় বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি করতেন। এক সময় ছেলে বড় হয়ে বিয়ে করে মাকে ফেলে চলে যায় শ্বশুর বাড়িতে।

ঝুরমান বেওয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ১৯৯১ সালে সরকার তার আবেদনে সাড়া দিয়ে বাবার বাড়ি জামনগর মৌজায় ৯৭ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত করে তাকে দলিল দেয়া হয়। প্রভাবশালীদের চাপ আর নিজের অভাব-অনটন এবং অক্ষরজ্ঞান না থাকায় সে জমি ভোগ করতে পারেননি তিনি। তিনি জানান, শেষ বয়সে তাই তার ইচ্ছে হয় জমিটুকু প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দান করার। যেন তার মতো গৃহহীন আরও অনেক পরিবার একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়।
গত শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ৮০ শতাংশ জমি সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেয়ার কাগজপত্র হস্তান্তর করেন ঝুরমান বেওয়া। বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল জমির প্রয়োজনীয় দলিলাদি গ্রহণ করেন। দলিল হস্তান্তরের সময় সেখানে জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস, উপজেলা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, জামনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি লোকমান হাকিম, জামনগর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী, বাঁশবাড়িয়া ভূমিহীন সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল মোত্তালেব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পে জমি হস্তান্তর করে বেজায় খুশি ঝুরমান বেওয়া। ঝুরমানের চাওয়া দীর্ঘদিন থেকে যে বিধবা বোন জরিনার পাশে ঝুপড়িতে থাকছেন, তার দেয়া জমিতে ঘর নির্মাণ হলে তার বোনের জন্য যেন একটি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়ার ইউএনও প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঝুরমান বেওয়ার এ অবদান দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিজে গৃহহীন হয়েও গৃহহীন আরও ৪০ জনের ঘর নির্মাণের জমি তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে হস্তান্তর করছেন। তিনি যেহেতু নিজেই গৃহহীন সে কারণে তার ৯৭ শতাংশ জমির মধ্যে ৮০ শতাংশ দান করার পর যে ১৭ শতাংশ অবশিষ্ট থাকবে, সেই জমিতে তাকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পে তার বিধবা বোন জরিনাকেও একটি ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.