জ্ঞান চর্চা ছাড়া রাজনীতিতে সফলতা আসবে না : মির্জা ফখরুল

 

ঢাকা প্রতিনিধি: জ্ঞান চর্চা ছাড়া রাজনীতিতে সফলতা আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও শাহাদাত বার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মাহবুব আলমের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক সামসুল আলম সেলিম, ডা. আবু নাসের প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধুমাত্র স্লোগান দিয়ে রাজনীতি করলে হবে না। জেনে-শুনে রাজনীতি করতে হবে। অন্যান্য দুই-একটি রাজনৈতিক দলের দিকে তাকিয়ে দেখেন, রেফারেন্স দিয়েই বলতে চাই- যদিও আমি জামায়াতে ইসলামের রাজনীতি সমর্থন করি না। কিন্তু তাদের যে কৌশল, তাদের যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তা অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত; ঠিক কমিউনিস্ট পার্টির মতো। তাদের স্টাডিসেল আছে, তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের সেল আছে, তাদের পড়ালেখা করতে হয় ও উত্তর দিতে হয়, তারা বই প্রকাশ করে, পত্রিকা প্রকাশ করে। এগুলো যদি না থাকে- জ্ঞান চর্চা ছাড়া কোনো সফলতা অর্জন করতে পারবেন না।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের আগেও বলেছি-আপনারা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন, বোঝার চেষ্টা করেন। দয়া করে আপনারা বিএনপির থিংকট্যাংক হন। শুধু বইপত্র নয়; আপনারা আলোচনা করেন, সেমিনার করেন যাতে করে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আমরা আরও জানতে পারি, মানুষকে বোঝাতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা এমন একটি পরিবেশে আছি, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে সত্য কথা বলতে গেলেই আমাদের মারতে আসবে, আবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হতে পারে। এর মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি জানলে আশ্চর্য হতে হবে। তিনি দেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুসংহত করতে উদ্যোগ নেন। সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক। সেজন্যই সকল রাজনৈতিক দল তার ওপর আস্থা রেখেছিল। কমিউনিস্ট পার্টি ও মোজাফফর সাহেবের ন্যাপ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফাকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন অত্যন্ত পরিপাটি ও দক্ষ সামরিক অফিসার। তিনি পেশাগত কাজে পাকিস্তানে বেশিরভাগ সময় থাকলেও তিনি বাংলাদেশের জন্য অতি কাতর ছিলেন। পড়ালেখা করতেন প্রচুর। তিনি নেতৃত্ব গুণ জন্মগতভাবে পেয়েছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের ছেলে মেয়েরা পড়তে চায় না। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে জানতে হলে পড়তে হবে। না হলে তো জানা যাবে না। সেজন্য বই পড়তে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখন কী ভয়াবহ অবস্থা। পত্রিকা খুললে লুট আর লুট ছাড়া কিছুই পাবেন না। যারা রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দায়িত্বে তারা লুট করছে। সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান, পুলিশের সাবেক প্রধান তাদের টা বেরিয়ে আসছে, সংসদ সদস্য চোরাচালানের সাথে জড়িত। টুকরা টুকরা হয়ে যায়। এ কোন সমাজ? মাদক-ওই যে কক্সবাজারের। ওদেরই বেশি প্রাধান্য ভদ্রলোক কয়জন আছে?
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করছে। স্বর্ণ লুট হয়, রিজার্ভের ডলার লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। শেয়ার বাজারে রথি মহারথীরা লুট করছে। তারা এতো বড় মানুষ তাদের পাশে যাওয়া যায় না। কেউ দরবেশ, কেউ সন্ন্যাসী- মাফিয়া, কেউ বড়। আজকে চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণ গায়েব হয়ে গেছে। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি বলেন, আজকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলে মনে হয় তারা কী যেন হয়ে গেছে। আজকে তাদের বাহিনীর প্রধান (বেনজীর) কোথায়? পিস্তল দেখিয়ে বলত-এটা এমনিই দেওয়া হয়নি। আর তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন তিনি নাকি বেনজীর সম্পর্কে জানেন না। রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঋণের বোঝা বইতে হবে। মাথাপিছু ঋণ এখন ১৫৫ হাজার টাকা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ডা. গাজী মাজহারুল হক, অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যাপক ড. আক্তার হোসেন, অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম, প্রকৌশলী একেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু, ডা. মো. মেহেদী হাসান, প্রকৌশলী শাহীন হাওলাদার, প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুল, অধ্যাপক ড. নাহারিন ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট নাদিম ভুইয়া, মিসেস শামিমা রহিম, দবির উদ্দিন তুষার, ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম তারিক।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মো: মাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.