জেলার শিবগঞ্জে গৃহবধূসহ ৫ মহিলাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন ॥ ভিটেছাড়ার হুমকি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের বিশ্বানথপুরে একটি রেজিষ্ট্রেশন বিহীন ক্লাব নির্মাণ কাজে বাধা দেয়ায় গাছের সাথে বেঁধে পৈশাচিক কায়দায় এক গৃহবধূসহ ৫ মহিলার উপর নির্যাতন চালিয়েছে “বিশ্বনাথপুর তরুন যুব সমিতি”র বখাটেরা। নির্যাতিত মহিলারা হচ্ছে, একই এলাকার সাথী বেগম, লাইলী বেগম, শ্যামলী খাতুন, বিউটি খাতুন ও বৃদ্ধা জুলেখা বেগম।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের জন্য এজাহার জমা দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। এঘটনায় সাথী বেগম, লাইলী বেগম, শ্যামলী খাতুন, বিউটি খাতুনসহ ৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বৃদ্ধা জুলেখা বেগমের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ভিটেমাটি ছেড়ে জীবন নিয়ে জমি থেকে সরে যাওয়ার হুমকিসহ নানাভাবে নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের বিশ্বানথপুরে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে জোরপূর্বক পুরুষ শূণ্য বাড়িতে “বিশ্বনাথপুর তরুন যুব সমিতি”র ক্লাব ঘর নির্মাণের চেষ্টা করে। এসময় জমির আসল মালিকের পরিবারে থাকা গৃহবধূ সহ নারীরা বাধা দেয়।
বার বার মিথ্যা মামলা করেও ক্লাবের পক্ষে জমির রায় না হওয়ায় অবশেষে পেশী শক্তির জোরে পরের জমিতে জোরপূর্বক ক্লাব নির্মাণের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার আশংকায় স্থানীয় বখাটে টমাম, রনি, চাঁন মেম্বার, মুকুল, সেন্টু, শাহজাহান, সেলিম, জুয়েল, বাবু, শফিকুল, সুমন, আইজুল, জমিবুর, জামিল, দোলা, সাদ্দাম, আরিফ, রনি, আলা, শহিদ, জানু, আনারুলসহ প্রায় ৩০/৩৫ জনের একটি দল মহিলাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং বাড়ির গৃহবধূ সাথী বেগমকে দড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালায়।
এদিকে, সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্বনাথপুর মৌজার সাবেক দাগ ১৩৭ ও হালদাগ ২৩৮ এর ৫৯ শতক জমি জবরদখলের জন্য ক্লাবের পক্ষে শিবগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন (২৩২/৯৪) আলমাস উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি। পরে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় ১৬/০৫/২০০৫ সালে মামলাটি আদালত খারিজ করে দেন।
আবারও মামলাটি দায়রা জজ আদালতে ৫৬/০৫ আপিল করে ক্লাবের ঐ অসাধু চক্রটি। সেখানেও হার মানে ক্লাবের দুস্কৃতিকারীরা। অবশেষে গত ০৬/০৪/২০১০ সালে আদালত পুনরায় রায় প্রদান করেন ভুক্তভোগী ঐ পরিবারের পক্ষে। তবে আদালতের এই রায় মানতে রাজি নয় ক্লাবের বখাটেরা। আদালতের আদেশ অমান্য করে হলেও ওই স্থানেই ক্লাব ঘর নির্মাণ করতেই হবে, এটা মনে করেই জোরপূর্বক ওই পরিবারকে ভিটেছাড়া করে “বিশ্বনাথপুর তরুন যুব সমিতি”র ঘর নির্মাণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তারা। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি থাকা জুলেখা বেগমের সঠিকভাবে সেবা প্রদান করছে না বলে নার্সদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সদের বিরুদ্ধে জুলেখা বেগমকে কেবিন থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। তবে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে পুনরায় তাকে কেবিনে রাখতে বাধ্য হয়।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের জন্য এজাহার জমা দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। তবে তদন্ত শেষে মামলা রুজূ হবে বলে জানান, ওসি তদন্ত মো. মাহতাব আলী। তিনি বলেন, সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এস.আই বাবুল। উভয় পক্ষকে কোন রকম ঝামেলা করতে নিষেধ করে আসলেও থামেনি ক্লাব কর্তৃপক্ষের নির্যাতন। বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছেনা পরিবারের কাউকে। বাঁশের বেরিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, বাড়ির কেউ পানি নিতে কিংবা টয়লেটে যেতে না পারে।
শারিরীকভাবে নির্যাতন করেও থামেনি এসব বখাটের অত্যাচার। নিরুপায় হয়ে অসহায় পরিবার উর্ধ্বতন প্রশাসনের কাছে বিষয়টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।#
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.