জেলার বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে চলছে প্রকাশ্যে ধুমপান ॥ দেখার কেউ নেই

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রকাশ্যে এবং জনসমাগম এলাকায় ধুমপান করা আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সারাদেশের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জুড়ে প্রকাশ্যে করতে ধুমপান। জনসচেতনতা দৃদ্ধির কারণে বর্তমানে বাসে বা ট্রেনে আর ধুমপান না করলেও জেনে শুনে এবং চায়ের দোকানীদের আশ্রয়ে/প্রশ্রয়ে জেলার বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার ধারে বৈধ বা অবৈধভাবে গড়ে উঠা চায়ের দোকানে চলছে মহা ধুমধামে ধুমপান। কোন সচেতন ব্যক্তি এর চায়ের দোকানে ধুমপান বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও ধুমপায়ী ও চায়ের দোকানের মালিকের উল্টো ভাবমুর্তি লক্ষ্য করা গেছে। যেন জনসমাগম এলাকায় ধুমপান করলেও কোন কিছু প্রতিবাদ করা অন্যায়।

এছাড়া প্রশাসনিকভাবে কোন নজরদারী চোখে পড়ে না বললেই চলে। এছাড়া বেসকারীভাবে ধুমপান বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে এবং ধুমপান প্রতিরোধ করার জন্য কাজ করলেও শুধু সভা-র‌্যালী করেই যেন দায়িত্ব শেষ। পরবর্তীতে এসব বেসরকারী সংস্থার কার্যক্রমও তেমন চোখে পড়ে না। তাই হয়তো অবৈধভাবে রাস্তার পার্শ্বে গড়ে উঠা চায়ের দোকানীরা ব্যবসার সুবিধা ভোগের জন্য ধুমপানে উৎসাহিত করছে তরুণ ধুমপায়ী ও বয়প্রাপ্ত ধুমপায়ীদের। ধুমপান গৃহীতার আশপাশের ধুমপান অপ্রিয় ব্যক্তিরা পড়ছে চমর বিপাকে। এছাড়া এই ধুমপান থেকে রক্ষা পাচ্ছে না দেশের আগামীর ভবিষ্যৎ শিশু ও নারীরাও।

এছাড়া বিভিন্ন পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানী বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার করে জেলায় ধুমপান প্রিয় ও যুবকদেরকে আকৃষ্ট করছে। ফলে দিনদিন বাড়ছে প্রকাশ্যে ধুমপান। প্রকাশ্যে ধুপমানের ফলে মানুষের দেহে সৃষ্টি হয় নানাবিধ রোগ। এমনকি এই ধুমপান না করেও যক্ষ্মা ও ক্যান্সারের মত মৃত্যু বুঝি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ধুমপান অপ্রিয় সাধারণ মানুষ। এছাড়া মাদকের পূর্ব শর্ত হচ্ছে ধুমপান। ধুমপান থেকেই ধীরে ধীরে ধুমপায়ীরা মাদকের দিকে আকৃষ্ট হয়।

যা আমাদের দেশের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু মাদকের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে, পূর্বেই ধুমপানের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এদিকে, জেলা বিভিন্ন হাট-বাজার, মোড়-ঘাটে ছোট ছোট পানের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রয় হচ্ছে বিভিন্ন টোবাকো কোম্পানীর সিগারেট-বিড়ি। হাতের নালাগে ক্ষতিকর তামাক দ্রব্য পেয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে, বাস স্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, হাট-ঘাটসহ বিভিন্ন রাস্তার উপরে প্রকাশ্যে ধুমপান করছে ধুমপান প্রিয়রা।

এব্যাপারে, ঢাকা মিরপুর শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজ রায়হান বলেন, প্রকাশ্যে ধুমপান করলে, শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রকাশ্যে ধুমপানের কারণে সিগারেটের ধোয়া বাতাসের সাথে মিশে সকলে প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের লান্সের মধ্যে প্রবেশ করে। মূলত. ধুমপানের কারণে যে রোগগুলো হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে সে সব রোগ নিয়ে বিভিন্ন বসয়ী মানুষকে তিন শ্রেণিতে বিভক্তি করা হয়েছে। ১. বড় মানুষের ক্ষেত্রে-যে ধুমপান করে এবং আর যারা ধুমপান করে না তাদেরও লান্সে ধুমপানের নিকোটিং প্রবেশ করে বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে লান্স ক্যান্সার, অগ্নাশ্ময় ক্যান্সার, এক্স ক্যান্সার, হাই প্রেসার, হৃদরোগ।

২. নারীদের ক্ষেত্রে-গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভে সন্তানের ওজন কম হওয়া, সময়ের পূর্বে নবজাতকের ভূমিষ্ট হওয়ারসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। ৩. শিশুদের ক্ষেত্রে-এলার্জি, হাপানী, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরণের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলেন জানান শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজ রায়হান। ধুমপানের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।

এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ধুমপান প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংস্থার বিসিডিপি’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলতাব হোসেন জানান, ধুমপান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করা হয় জেলা প্রশাসন ও এনজিওর সহযোগিতায় হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ধুমপান প্রতিরোধের জন্য ভ্রাম্যমান আদালতও পরিচালনা করা হয় জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে।

বর্তমানে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে অনেক। তারপরও রাস্তার পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে ধুপমান চলছে। এসবের বিরুদ্ধে আলোচনা স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.