নিজস্ব প্রতিবেদক:বিএনপি কখনো পালায়নি। আওয়ামীলীগ পালায়। বিএনপি জনগণের দল। ভোটের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বার বার দেশের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে। কারণ বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। বিএনপি দীর্ঘ সতের বছর ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। সে আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি।
মঙ্গলবার বিকেলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দেশ জুরে বিএনপি’র বিজয় র্যালি উপলক্ষে রাজশাহীর পবা উপজেলা ও নওহাটা পৌর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের আয়োজনে বিজয় র্যালি পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম এই কথা গুলো বলেন।
তিনি বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। কারণ দেশে টাকার মান কমেছে। বেড়েছে বেকারত্ব। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে দুর্ভিক্ষ হবে। এজন্য দ্রুত দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রয়োজন। আর এই নির্বাচন যারা চায়না তারা হচ্ছে ভারতের দালাল।
তিনি আরো বলেন, কিছু টোকাই পরামর্শ দিচ্ছে নির্বাচন পেছনোর জন্য। কারণ নির্বাচিত সরকার আসলে ঐ সব টোকাইদের চাঁদাবাজী বন্ধ হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, যারা নির্বাচন চায়না এবং যারা নির্বাচন পেছানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছে তারাই মূলত দেশে চাঁদাবাজী করছে।
তিনি বলেন, তরুনরা দীর্ঘ সতের বছর ভোট দিতে পারেনি। তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে এবং দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যেই নির্বাচনের দাবী করেন তিনি। বিএনপি ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসকে দেশের সেবা করার জন্য বসিয়েছেন। তার মানে এই না তাঁর নিকট দেশকে লিজ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই এক বছরের মধ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের অনেক উপদেষ্টা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তারা আওয়ামী লীগের মত হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। এরও হিসাব নেয়া হবে এবং বিচার করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সাথে যান। আর নির্বাচন না দিলে বিএনপি কি জিনিষ তা বুঝতে পারবেন। সারাদেশে মিছিলের বন্যা বয়ে যাবে বলে হুঁমিয়ারী দেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খুনি হাসিনা অপারে বসে থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। সেখান থেকে ভিডিও কল করে নির্দেশনা দিচ্ছে। তার পরামর্শে এ দেশে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামীলীগের দোসররা দেশে আন্দোলন শুরু করলেও বর্তমান সরকার তা রুখতে পারছেনা।
এছাড়াও তিনি একটি ছাত্র সংগঠনকে বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবেনা। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষনাকে প্রধান্য ও সম্মান দেখনোর আহ্বান জানান তিনি। কারণ তিনিই হলেন জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড।
বক্তব্য শেষে তিনি পবা-মোহনপুর আসনের জন্য বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রান পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল হক মিলনকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করেন তিনি। সেইসাথে তাঁর পাশে থাকার জন্য পবা-মোহনপুরের জনগণকে মিলনের পাশে থাকার আহব্বান জানান তিনি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রান পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, বিএনপি’র দীর্ঘ সতের বছরের আন্দোলনের সময় ষাট লক্ষ নেতাকর্মীর নামে মামলা করেছে পতিত সরকার ও তার আওয়ামী পুলিশ। দুই লক্ষ মামলা হয়েছে। প্রায় বিশ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সেইসাথে খুনি হাসিনা জুলাই আগস্টে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। হত্যা করেছে অবুঝ শিশুকেও। হত্যা করেও শেষ রক্ষা হয়নি ফ্যাসিস্ট হাসিনার। তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, দেশের জনগণ আওয়ামীলীগকে আর কোনদিন এদেশে আসতে দেবেনা। সেইসাথে দেশে কোন দল বা ব্যক্তি ফ্যাসিস্ট আচরণ করলে আর বরদাস্ত করা হবেনা।
তিনি আরো বলেন, একটি দলের দুইজন নেতা এখনো সরকারে রয়ে গেছে। আগামী নির্বাচনে তিনি ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু তাঁদের সে আশা কোনদিন পুরণ হবেনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিএনপি ও দেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। যারা ষড়যন্ত্র করবে তাদের হাসিনার মত অবস্থা হবে। দল এবং দেশকে রক্ষা করতে আবারও সবাইকে রাজপথে নামার আহŸান জানান তিনি।
নওহাটা পৌর বিএনপি’র সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক এর সভাপতিত্বে এবং পবা উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব ও জেলা বিএনপি’র সদস্য সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ও নওহাটা পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাকিবুর ইসলাম পিটারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, জেলা বিএনপি’র সদস্য ও নওহাটা পৌর সাবেক মেয়র শেখ মকবুল হোসেন, পবা উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ ও আব্দুস সালাম মাস্টার।
আরো উপস্থিত ছিলেন, নওহাটা পৌর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর সরকার জেড, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান, সদস্য এমদাদুল হক এমদাদ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন, কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াদুদ হাসান পিন্টু, পবা উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাইজুল ইসলাম, সোহেল রানা, ইফতেখারুল ইসলাম ডনি, মিজানুর রহমান মিলন, সাহেব জাদা নওহাটা পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক সুজন মোল্লা, এডভোকেট তারেক, পবা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান হাফিজ, নওহাটা পৌর ছাত্রদলের সভাপতি সোহেল রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুজনসহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মীবৃন্দ।
বক্তব্য শেষে শফিকুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বে বিজয় র্যালি বের করা হয়। নওহাটা কলেজের সামনে থেকে র্যালি বের করে নওহাটা পৌর বাজার প্রদক্ষিণ করে পুনরায় নওহাটা কলেজের সামনে এসে শেষ হয়। র্যালিতে নেতাকর্মীরা নানা ধরনের স্নোগান দিতে থাকেন। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.