জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি: দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকার উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, দেশের বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম উদ্ভিদ প্রজাতির জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাস্তবায়নাধীন বর্তমান প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত উদ্ভিদ জরিপ হতে পাওয়া ফলাফল দেশের শিক্ষা, গবেষণা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও এসব তথ্য জৈবিক বৈচিত্র্যের কনভেনশন, বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কনভেনশন এবং জলাভূমিতে রামসার কনভেনশনের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামে বরিশাল ও সিলেট বিভাগের উদ্ভিদ প্রজাতি জরিপ শীর্ষক প্রকল্পের কর্মশালার উদ্বোধন হয়। এ অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এতে সভাপতিত্ব করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। এ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মিজানুল হক চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী ও এসভিএফবিএস প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. সরদার নাসির উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
উদ্ভিদ প্রজাতি নিয়ে গবেষণাকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এসময় বলেন, দেশের সব বাস্তুতন্ত্রের উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের উদ্ভিদ প্রজাতির সঠিক পরিসংখ্যান জানা প্রয়োজন। শুধুমাত্র একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ জরীপের মাধ্যমেই দেশের উদ্ভিদ সম্পদের হালনাগাদ পরিসংখ্যান, অবস্থান ও সংরক্ষণ অবস্থা সম্পর্কে জানা সম্ভব।
‘উদ্ভিদ বৈচিত্র্য বিবেচনায় বরিশাল একটি সদা পরিবর্তনশীল এবং ক্রমক্ষয়িষ্ণু বিভাগ। এ বিভাগের উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা এক হাজারের বেশি বলে ধারণা করা হয়। অন্যদিকে সিলেট বিভাগে উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের প্রাচুর্য সৃষ্টির পক্ষে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। সিলেট বিভাগের উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ১৫০০ এর অধিক বলে জানা যায়। তবে সিলেট বিভাগের উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের কোন পূর্ণাঙ্গ জরিপ এখনো সম্পন্ন করা হয়নি। তাই এ প্রকল্পে বরিশাল ও সিলেট বিভাগের উদ্ভিদ সম্পদের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, বৈচিত্র্য নথিবদ্ধ করা, সংরক্ষণ ও সুষম ব্যবহারের জন্য মাঠপর্যায়ে বিজ্ঞান সম্মত জরিপের মাধ্যমে প্রায় ৭০হাজার উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করে তথ্য সম্বলিত দুটি পুস্তক প্রণয়ন করা হবে। একই সঙ্গে সব তথ্যর ই-ডাটাবেজ প্রস্তুত করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, এর আগে বিএনএইচ ‘সার্ভে অব ভাস্কুলার ফ্লোরা অব চিটাগাং অ্যান্ড দ্য চিটাগাং হিল ট্রাক্টস্’ শিরোনামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাস্কুলার উদ্ভিদ প্রজাতিসমূহের অনুসন্ধান, ফ্লোরিস্টিক দলিল রচনা ও নমুনা সংরক্ষণের কাজটি সম্পন্ন করেছে। একই সঙ্গে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের উদ্ভিদ প্রজাতির লাল তালিকা প্রণয়ন করেছে। এছাড়া পাঁচটি নির্বাচিত রক্ষিত এলাকার ভিনদেশী আগ্রাসী উদ্ভিদ নিয়ন্ত্রণের কৌশলপত্র উদ্ভাবনের কাজ করে যাচ্ছে। যা দেশের উদ্ভিদ সম্পর্কিত তথ্যের অপ্রতুলতা দূর করে, উদ্ভিদ তথা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ লোকমান হোসেন পলা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.