জীবন থেকে নেয়া কিংবদন্তীর জীবনের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন। ষাটের দশক থেকে চলচ্চিত্র জগতে তার আর্বিভাব। শুধু নির্মাতা হিসেবে নন, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার ও গীতিকার হিসেবে সৃষ্টিশীলতার জগৎ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসামান্য অবদান রেখেছেন আমজাদ হোসেন। পেয়েছেন জাতীয়, আন্তর্জাতিক বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। তার নির্মিত বেশকিছু সিনেমা তৎকালীন সময়েই বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দুপুরে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি মানুষটি মৃত্যু বরণ করেছেন।

১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জন্মেছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুরে। ষাটের দশকের শুরুতেই চলচ্চিত্রে নামেন আমজাদ হোসেন। শুরুতে অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ‘হারানো সুর’ মতান্তরে ‘তোমার আমার’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে বড় পর্দায় অভিষিক্ত হন তিনি। এরপর টানা অভিনয় করেন। তবে অভিনয়ের চেয়ে তার ক্ষুধা ছিলো চলচ্চিত্রের গল্প ও নির্মাণের দিকে। সুযোগ পেয়ে তাই যোগ দেন তৎকালীন খ্যাতিমান নির্মাতা জহির রায়হানের সঙ্গে।

জহির রায়হানের অন্তর্ধানের আগ পর্যন্ত তার সঙ্গে কাজ করেছিলেন আমজাদ হোসেন। ‘বেহুলা’র পর প্রায় সব চলচ্চিত্রেই আমজাদ হোসেনকে নিয়ে কাজ করেছিলেন জহির রায়হান। এমনকি তার শেষ কাহিনীচিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’র রচয়িতাও ছিলেন আমজাদ হোসেন। সংলাপ রচয়িতা, কাহিনীকার, গীতিকার ও অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রের সব বিভাগে নিজস্বতা দেখিয়েছেন তিনি। ‘জুলেখা’র মধ্য দিয়ে পরিচালক হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর একের পর এক পরিচালনা করেন কাহিনীচিত্র। নির্মাণ করেন নয়নমনি, গোলাপী এখন ট্রেনে, কসাই, দুই পয়সার আলতা, জন্ম থেকে জ্বলছি, ভাত দে’র মতো কালজয়ী সব চলচ্চিত্র।

চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে এখন পর্যন্ত তিনিই সবচেয়ে বেশী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনকারী ব্যক্তিত্ব। পুরো ক্যারিয়ারে মোট ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ৬টি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন আমজাদ হোসেন। শুধু নির্মাতা হিসেবেই নয়, গীতিকার কিংবা লেখক হিসেবেও প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন আমজাদ হোসেন। তার লেখা বেশকিছু গান আজও মানুষের মুখে মুখে। কলেজে পড়া অবস্থায় তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় কলকাতার বিখ্যাত দেশ পত্রিকায়। ধ্রুপদী এখন ট্রেনে, আগুনের অলঙ্কার, শেষ রজনী, মাধবীর মাধব এবং ঝরা ফুলসহ অসংখ্য উপন্যাসের রচয়িতা তিনি। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার লাভ করেন।

চলচ্চিত্র অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা, নির্মাতা, গীতিকার ও সৃষ্টিশীল লেখক আমজাদ হোসেনের প্রয়াণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, গানের জগত ও সাহিত্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতে আমজাদ হোসেন এক অবিকল্প নাম। তার প্রয়াণে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.