জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সাভার প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে তাঁরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
এ সময় জড়িতদের বিচারের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া একই দাবিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মশাল মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বামীকে হলে জিম্মি করে তাঁর স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। আজকে আমি ক্লাসে বলেছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গজব নাজিল হওয়া উচিত, আমাদের সবার ধ্বংস হয়ে যাওয়া উচিত। এই সভ্যতার বিশ্ববিদ্যালয় কোনো দরকার নেই।’
গোলাম রব্বানী আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এখন প্রায় আড়াই হাজার অছাত্র রয়েছে। এই ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, যত দিন প্রশাসনের মদদে এই ক্যাম্পাসে অছাত্র, অবৈধ ছাত্র অবস্থান করবে, ছাত্রলীগ নামধারী অছাত্ররা নিয়োগ-বাণিজ্য করবে, চাঁদাবাজি করবে—তত দিন এই ক্যাম্পাস থেকে অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়। আমরাও উপাচার্যকে বলে দিতে চাই, আমরা অনেক বড় বড় উপাচার্যকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছি। আমরা আপনাকেও বিতাড়িত করে ছাড়ব, যদি আপনারা এদের বিচার না করেন।’
অধ্যাপক রব্বানী বলেন, ‘আমরা এই ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। এই ধর্ষণকারীদের মদদদাতা প্রশাসনের পদত্যাগ চাই। এই ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এই ক্যাম্পাসে কোনো অবৈধ, সন্ত্রাসী, অছাত্র, মাদক কারবারি থাকবে না। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে প্রয়োজনে আমি শহীদ হয়ে যাব। যেসব হলে প্রাধ্যক্ষ অছাত্রদের দিয়ে হল চালায়, সেসব হলে প্রাধ্যক্ষ থাকতে পারবে না।’
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লা ভূঁইয়া বলেন, ‘আপনারা জানেন, এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকলেও তার কোনো সঠিক বিচার হয়নি। কোনো ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়, প্রত্যেকটা ঘটনার সঙ্গে থাকে একটা যোগাযোগ, একটা কার্য কারণিক সম্পর্ক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অপরাধের বিচার হয় না।’
অন্যদিকে বেলা ২টার দিকে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
মানববন্ধনে শাখা ছাত্রলীগের উপক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আলিফ আফিসান দীপ বলেন, ‘ধর্ষকের শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে। আমরা কখনোই একজন ধর্ষককে ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের অংশ বলে বিশ্বাস করি না। ধর্ষক কোনো দলের নয়, সংগঠনের নয়। ধর্ষকের স্থান জেলের অভ্যন্তরে, ধর্ষকের স্থান সর্বোচ্চ শাস্তির মানদণ্ডে। কোনো ধর্ষকের স্থান এই ক্যাম্পাসে নেই।’
এর আগে, গতকাল শনিবার রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সাভার প্রতিনিধি মো. শামিম আহম্মেদ (শামিম)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.