জার্মানিতে ভয়াবহ বন্যা, দমকলকর্মী নিহত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রবল বন্যায় রাবারের ডিঙিতে চড়ে উদ্ধারকাজ চালানোর সময় এক দমকলকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ জার্মানিতে অন্তত একজন নিখোঁজ রয়েছেন। বন্যার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থগিত করা হয়েছে। এই অঞ্চলে আরো বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
প্রবল বন্যার ফলে বাভারিয়ান শহর ফাফেনহোফেন আন ডেয়া ইলমের বিধ্বস্ত একটি বাড়ির বাসিন্দাদের উদ্ধারের জন্য বাড়িটিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন দমকলকর্মী। এসময় ৪২ বছর বয়সি স্বেচ্ছাসেবী মারা গিয়েছেন বলে জানা গেছে। রোববার সকালে ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করা হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাবারের ডিঙিতে থাকা অন্য উদ্ধারকর্মীরা জীবিত আছেন।
বাভারিয়ার শ্রোবেনহাউসেনে এক নারী তার বাড়ির বেসমেন্ট প্লাবিত হওয়ার পরে নিখোঁজ হয়েছেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই এলাকায় আচমকা পানির স্তর বৃদ্ধির সময় বেসমেন্টে ছিলেন ৪৩ বছর বয়সি নারী। তারপর থেকে তার খোঁজ মিলছে না। বাড়িটিও ধসে পড়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ডুবুরিদের মোতায়েন করা হলেও তারা বাড়ির সর্বনিম্ন স্তরে প্রবেশ করতে পারেনি। রোববার সকালে কর্তৃপক্ষ ওই বাড়ি ও আশপাশের এলাকা খালি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বাভারিয়ান অফিংগেনে ২২ বছর বয়সী এক দমকলকর্মীর খোঁজ মিলছে না। উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। রাবারের ডিঙি উল্টে তিনি ডুবে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। অনুসন্ধানে সহায়তার জন্য এলাকায় হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার জার্মানির আবহাওয়া সংস্থা ডিাডাব্লিউডি ইতিমধ্যে বন্যাপ্লাবিত এলাকাগুলোতে নতুন করে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে এমন সতর্কতা জারি করেছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, উত্তর বাভারিয়া এবং বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গের কিছু অংশে রোববার বিকেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭০ লিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।
দানিউব ও অন্যান্য নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বাভারিয়ার একাধিক জায়গায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক আবহাওয়া সতর্কতা বলছে, এই ঝড় স্যাক্সনি এবং স্যাক্সনি-আনহাল্টের রাজ্যের পাশাপাশি টুরিংগিয়াতে প্রভাব ফেলতে পারে। দানিউব নদীর ক্রমবর্ধমান জলসত্রের কারণে মিউনিখ এবং স্টুটগার্টের গ্যুনজব্যার্গ শহর থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।
মেয়র গেরহার্ড ইয়েওয়েরনিশ একটি অনলাইন পোস্টে লিখেছেন, “আমাদের শহুরে এলাকার বেশ কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। লোকজনকে তাদের বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নৌকা ও হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হচ্ছে।” তিনি গুনজবার্গের বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকতে, উদ্ধারকারীদের দেওয়া নির্দেশাবলী অনুসরণ করার এবং উদ্ধারকাজকে সহজতর করার জন্য রাস্তা বন্ধ রাখার আহ্বান জানান।
দক্ষিণ জার্মানিতে বন্যা পরিস্থিতির পর বাভারিয়ান রাজ্যের প্রধান প্রিমিয়ার মার্কাস স্যোডার বলেন, শুধুমাত্র তার রাজ্যেই ৪০ হাজার উদ্ধারকারী মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দ্রুত (উদ্ধারকারীদের) প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা। বিশ্রাম না নিয়ে উদ্ধারকারীরা যত বেশি সময় কাজ করবেন, তত বেশি ভুলের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ক্লান্তির ফলে মৃত্যু এবং আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।”
এদিকে দেশটির অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেকের সঙ্গে একত্রে ক্ষতিগ্রস্ত শহর মার্কট রাইসার্স্টোফেন পরিদর্শন করেন স্যোডার। অর্থায়ন এবং লোকবল উভয় ক্ষেত্রেই ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে সমর্থন চান স্যোডার । স্থানীয় কর্মকর্তারা রোববার জানান, বাভারিয়ান শহর ফাফেনহোফেন আন ইলমের কাছে দানিউবের শাখা পার নদীর দুটি বাঁধ ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একতলা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার এবং ভবনের উঁচুতলায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। দমকল বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ফাফেনহোফেন অঞ্চল এমনভাবে প্লাবিত হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। তার কথায়, ‘‘আমাদের আর কিছু করার নেই, আমাদের হাল ছেড়ে দিতে হবে। যদিও দমকলবিভাগের কর্মীরা এখনো মানুষের জীবন রক্ষার কাজ করে চলেছে।
ফাফেনহোফেনে দমকলকর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে উদ্ধারকারী এবং সাহায্যকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। দমকলকর্মীর পরিবারকেও সমবেদনা জানান জার্মান চ্যান্সেলর।
জার্মানির রেলওয়ে অপারেটর ডিবি বন্যা কবলিত এলাকায় ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। বন্যা ও ভূমিধসের কারণে দক্ষিণ জার্মানি জুড়ে ট্রেন বাতিল হয়েছে। বেশিরভাগ চ্রেন দেরিতে চলছে।
ডয়চে বানের (ডিবি) একজন মুখপাত্র বলেছেন, মিউনিখ, স্টুটগার্ট এবং আউগসবুর্গের সঙ্গে এবং সেখান থেকে বেশ কয়েকটা সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে মিউনিখ এবং বার্লিন, মিউনিখ এবং জুরিখের সুইস মেট্রোপলিস, পাশাপাশি স্টুটগার্ট এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের মধ্যে ট্রেন বাতিল হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.