জাপা’তে ক্ষোভ: এরশাদের কত টাকা দরকার ?- প্রশ্ন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কত টাকা দরকার? জানতে চেয়েছেন তারই পার্টির নেতারা।

জোটের রাজনীতির কাছে পরাজিত, জাপার ভোটের রাজনীতিতে বঞ্চিত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ‘টাকা’র প্রশ্নকে সামনে এনেছেন। একই সাথে জাপার সকল খরচ চালানোর সক্ষমতা রাখার কথা বলছেন কেউ কেউ।

আজ বুধবার মনোনয়নপত্র দাখিল করার শেষ দিন । তার আগেই জাপা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয় নীতিনির্ধারক শূন্য হয়েছে।

এদিকে, জেলা ও উপজেলা শহরের নেতাদের মুখোমুখি না হতেই এরশাদ সিএমএইচে ভর্তি হয়েছেন বলে সমালোচনা করেন প্রত্যন্ত এলাকার লাঙল প্রতীক প্রত্যাশিত প্রার্থীরা।

জাপা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়পত্র দেয়া হলেও মনোনয়নপত্র দেয়ার দায়িত্বে থাকা পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের বরিশাল চলে যাওয়া (মঙ্গলবার) এবং মনোনয়নপত্র দেয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না করার কারণে শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের ভাগ্যে কী রয়েছে তা জানার আগ্রহ ছিল অনেকের।

গতকাল দিনভর অপেক্ষার পর গাজীপুর-৫ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী গাজী ওবায়দুল কবির (মজনু) আক্ষেপ করে বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের কত টাকা দরকার? তার পার্টি চালানোর মতো সক্ষমতা আমার একারই আছে।’

তারপর উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এরশাদের কোনো সেন্স নেই। ওনার বয়স ৯১ হয়ে গেছে। তারপর পার্টি কে ধরে রাখবে সেই দিকে তার খেয়াল নেই। তাকে কে ভাই ডাকল…ইত্যাদি।’

আক্ষেপ করে তিনি আরো বলেন, ‘কেন ২৮ বছর কাটিয়ে দিলাম তার মতো (এরশাদ) নেতার পেছনে। সে আর্মির লোক আর্মিতে থাকতো। সে তো রাজনীতি বোঝে না।’

জাতীয় পার্টির হাইকমান্ড কর্মীদের সঙ্গে বিট্রেই করেছে উল্লেখ করে মনোনয়নপত্র বিক্রির ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২২ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগও তুলেছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ নির্বাচনী আসন থেকে ১৯৯১ সালে জয়লাভ করা এই প্রার্থী।

এ প্রসঙ্গে মজনু বলেন, ‘২ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে, তারপর আবার ১ কোটি টাকা চেয়ে মনোনয়ন বিক্রি করছে। তাহলে উনার মতো এরশাদ সাহেবের কাছে কেন আসব।’

তিনি আরো বলেন, ‘২২ হাজার টাকা নিয়ে এক প্যাকেট বিরিয়ানি খাওয়াইছে। তার চেয়ে বিট্রেই কী হতে পারে। ২২ হাজার টাকা দিয়ে সোনারগাঁও কিংবা শেরাটন হোটেলে খাবো। কেন তাকে ২২ হাজার টাকা দিলাম?’

এদিকে, দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সাথে সাথে জাতীয় পার্টি প্রত্যাহারপত্রেও স্বাক্ষর নিয়েছে। যা ভয়ংকর রাজনৈতিক প্রতারণা বলে মনে করছেন বগুড়া-৫ আসনের লাঙল প্রতীক প্রত্যাশী তাজ মোহাম্মদ শেখ।

তিনি লাঙল প্রতীক না পেলেও স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের মাঠ থাকবেন বলে জানান।

এক সময় জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তাজ মোহাম্মদ মহাজোটের সঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে নিজেকে সৎ দাবি করেন। তার ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে (হাবিবুর রহমান) দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে মন্তব্য করেন তিনি।

সৎ প্রার্থীদের মহাজোটে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এই বিচারক।

‘অপরাধী স্বামীর পরিবর্তে স্ত্রী, অপরাধী ছেলের পরিবর্তে বাবা’- মহাজোটের এ রকম প্রার্থী মনোনয়নকে তিনি রাজনৈতিক প্রতারণা বলে মন্তব্য করেন।

 

এদিকে, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী শেখ শরিফুল ইসলাম বলেন, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা বলে আমাদের তৈরি হতে বলা হয়েছিল। সে জন্য গত চার মাসে ৭ লাখ টাকার ওপরে খরচ করেছি কর্মীদের পেছনে। বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশে গাড়ি ভাড়া করে কর্মীদের নিয়ে যেতে হয়েছে। এই খরচের টাকা এখন কে দিবে- প্রশ্ন তারা।

ভোটের মাঠে না থাকতে পারলে কর্মীদের কাছে কোনো মূল্যায়ন পাবেন না উল্লেখ করে প্রথমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা শরিফুল বলেন, আমাদের মতো ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে পার্টি কী করতে পারবে? পার্টির টাকার যোগান দিচ্ছি, এরপর পার্টি এমপি হবার সুযোগ না দিলে কেন টাকা খরচ করব?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ায় রাজনীতির মাঠ থেকে সারাজীবনের জন্য তাকে বিতাড়িত করা হয়েছে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।#

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.