জাতীয় রাজনীতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে অভিষেক

(জাতীয় রাজনীতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে অভিষেক–ছবি: প্রতিনিধির)
কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: সংসদীয় রাজনীতিতে আবির্ভাব হয়েছিল অনেক আগেই। এবারে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক অভিষেকের পালা।
আজ বুধবার, ২১জুলাই কলকাতায় দলের ‘শহিদ দিবস’ উদযাপনের সাংগঠনিক দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে পালন করেই দিল্লি রওনা হয়ে যাওয়ার কথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
আগামীকাল বৃহস্পতিবারই তাঁর জরুরি বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা তৃণমূলের সাংসদদের সঙ্গে। লক্ষ্য, জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্বে তৃণমূলকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে মত বিনিময় এবং অবশ্যই সংসদের চলতি বাদল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ ক্ষুরধার করার কৌশল রচনা। এরপরে ২৬ তারিখেই দিন কয়েকের জন্য দিল্লি পৌঁছে যাওয়ার কথা তৃণমূলের শীর্ষনেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইতে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়াই তাঁর এবারের দিল্লি সফরের মূল উদ্দেশ্য।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক। সহজ-সরল-নিস্পাপ মুখ। বিনীত হাসি লেগেই আছে ঠোঁটের কোণে। দিল্লিতে ম্যানেজমেন্ট শিক্ষার দৌলতে লিডারশিপ কোয়ালিটিও অর্জন করেছেন দ্রুত। আয়ত্তে এনেছেন কর্পোরেট কালচারও। ইন্সটিটিউটে তাঁর অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু কখনওই কাউকে বুঝতে দেননি যে তিনি বাংলার ফায়ারব্র্যান্ড নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের গ্রুমিংটাই তাঁকে রাজনীতিতেও ঝকঝকে স্মার্ট করে তুলেছে নিঃসন্দেহে। পিসি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। ২০১৪ তে পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে প্রথম নির্বাচিত হন সংসদে।
তৃণমূল যুবার শীর্ষনেতা হিসেবে শুরু করে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি হিসেবে জার্নিটা অভিষেককে দ্রুত পরিণত করে তোলে রাজনীতিতে। তারপরে যতদিন গেছে লাজুক স্বভাবটা কাটিয়ে উঠে মিশে গেছেন আমজনতার মধ্যে। দুর্যোগে-দুর্বিপাকে দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে।
লক্ষ্য করার বিষয়, বাংলার সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে  তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ভাইপো অভিষেকের বিরুদ্ধেও তীব্র ভাষায় আক্রমণ চালিয়ে গেছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে তৃণমূল ত্যাগ করে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী, কেউই নির্বাচনী প্রচারে রেয়াত করেননি অভিষেককে। এসবের জবাব দিতে গিয়ে অজস্র জনসভায় নিজেকে তুখোড় বক্তা হিসেবে প্রমাণ করেছেন অভিষেক। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য রাজনীতিতে তো বটেই ,জাতীয় স্তরেও রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন তিনি। নির্বাচনী ফলাফলে তৃণমূলের অসাধারণ সাফল্যে অভিষেকের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুদায়িত্ব সম্প্রতি দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
এই গুরুদায়িত্ব পালনের পথে তাঁর প্রাথমিক পদক্ষেপ আগামীকাল বৃহস্পতিবারই। সংসদের বাদল অধিবেশনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি এদিনই তিনি বসছেন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদদের সঙ্গে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্যসভায় সহ দলনেতা প্রবীণ সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের দিল্লির বাসভবনেই অভিষেকের পৌরহিত্যে বসবে এই জরুরি বৈঠক। জানিয়েছেন সুখেন্দুবাবুই। থাকছে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনও। এটা ঘটনা, সারা দেশে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তোলার মহড়া শুরু হয়ে গেছে আজ বুধবারই। দিল্লিতে বসে জায়েন্ট স্ক্রিনে মমতার ভাষণ শুনেছেন কংগ্রেসের পি চিদাম্বরম, দিগ্বিজয় সিং, এনসিপি সুপ্রিমো শারদ পাওয়ার, সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চনের মতো  নেতানেত্রীরা। দেখেছেন ডিএমকে এবং আর জে ডির প্রতিনিধিরা। গুজরাট ,উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতেও প্রচারিত হয়েছে মমতার ভাষণ। স্পষ্টতই বিজেপি বিরোধী মহাজোটের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন মমতা। এই সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েই সাংসদদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন অভিষেক।
সব মিলিয়ে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হিসেবে এবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মপ্রকাশের পালা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। # 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.