জাতিসংঘ সংস্থার ১২০০ কর্মী হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত : ইসরাইল

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রায় এক হাজার ২০০ কর্মী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সংস্থাটির আরও হাজার হাজার কর্মীর গাজার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল।
দেশটির করা একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ দশটি দেশ জাতিসংঘের তহবিল সাময়িক স্থগিত করেছে। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ইসরাইলের ওই প্রতিবেদনটি হামাস সন্ত্রাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য এবং গাজা থেকে উদ্ধার করা নথির ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
এতে অভিযোগ উঠেছে, গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) ১২ হাজার কর্মীর প্রায় ১০ শতাংশই হামাস বা ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া গোয়েন্দা তথ্যানুসারে, এজেন্সির সব কর্মীদের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রয়েছে প্রায় অর্ধেক বা ৬ হাজারের কাছাকাছি। ওই সব সংগঠনগুলো ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের ‘অপারেটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। এর মানে, তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের সামরিক বা রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নিত।
ইসরাইলি সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন, ইউএনআরডব্লিউএ শুধু ৭ অক্টোবরের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত বিষয়টি এমন নয়। প্রতিষ্ঠানটি সামগ্রিকভাবে হামাসের উগ্র মতাদর্শের আশ্রয় স্থলও।
তবে এ অভিযোগ নিয়ে কোনো প্রকার মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে ইউএনআরডব্লিউএ।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের ১২ সদস্যের বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে এ নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, যেখানে গাজার প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে গড়ে ১৫ শতাংশেরই হামাসের সঙ্গে কিছুটা হলেও সম্পর্ক রয়েছে, সেখানে ইউএনআরডব্লিউএর পুরুষ কর্মচারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কর্মী রয়েছে। পুরুষ কর্মচারীদের এ সংখ্যা সংস্থার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এছাড়া গাজার বৃহৎ জনসংখ্যার তুলনায় দাতব্য সংস্থাটির ওপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির বেশি প্রভাব থাকার অভিযোগও রয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএর রাজনৈতিকীকরণ নিয়ে আগেও সজাগ হয়েছিল ইসরাইল। তখন সংস্থাটির সাবেক ইউনিয়ন প্রধান সুহেল আল-হিন্দি ২০১৭ সালে হামাসের একটি সিনিয়র পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গোয়েন্দা তথ্যটি প্রকাশ হওয়ামাত্রই হিন্দিকে বহিষ্কার করেছিল ইউএনআরডব্লিউএ। সংস্থাটি হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ১২ কর্মীর মধ্যে নয়জনকেই বরখাস্ত করেছে। তাদের মধ্যে একজন আরবি শিক্ষকও রয়েছেন। তিনি সন্ত্রাসীদের একজন কমান্ডার ছিলেন যিনি ৭ অক্টোবর কিবুতজ বেইরিতে হামাসের হত্যাকাণ্ডেও অংশ নিয়েছিলেন।
অভিযুক্ত ওই ১২ জনের মধ্যে দুইজন ইতোমধ্যেই মারা গেছেন। বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
বহিষ্কার হওয়া ওইসব কর্মীদের মধ্যে অন্যান্য শিক্ষক ও সমাজকর্মীরাও ছিল। তারা দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। তখন হামাস যোদ্ধাদের হাতে প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হন। এ সময় ২৪০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
দাতব্য সংস্থাটির বিরুদ্ধে ইসরাইলের এমন অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার প্রায় ২০ লাখ অসহায় বাসিন্দাদের কাছে সংস্থাটির সহায়তা পৌঁছে দেওয়া নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ দশটি দেশ ইউএনআরডব্লিউএকে দেওয়া লাখ লাখ ডলারের সহায়তা তহবিল স্থগিত করেছে। দেশগুলোর এমন পদক্ষেপ সামগ্রিকভাবে ফিলিস্তিনিদের অন্যায়ভাবে শাস্তি দিচ্ছে বলে সমালোচনা করেছেন সংস্থাটির কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি।
সপ্তাহান্তে লাজারিনি বলেছেন, আমাদের মানবিক সাহায্যের উদ্যোগটি মুখ থুবড়ে পড়ছে। এর ওপর গাজার ২০ লাখ মানুষ নির্ভরশীল। কয়েকজন ব্যক্তির কথিত আচরণের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে দেখে আমি হতবাক। গাজায় এখনো যুদ্ধ চলছে। সেই সঙ্গে সাহায্যের চাহিদা এবং দুর্ভিক্ষও বাড়ছে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের সবাই মিলে অতিরিক্ত এ শাস্তি দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। তাদের প্রতি এমন আচরণ আমাদের সবার মনে দাগ কাটে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.