জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষিতে নতুন সংযোজন‘ পলিনেট হাউস’ শীতের সবজি গ্রীষ্মে, গ্রীষ্মের সবজি শীতে, শস্য ভান্ডার খ্যাত রাজশাহীতে


নিজস্ব প্রকিবেদক: একসময় ভালো স্বাদের সবজির জন্য শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। গ্রীষ্মকাল ছিল সবজির আকালের সময়। পলিনেটে’র সুবাদে এখন প্রায় সারা বছরই সবজি পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানের নতুন উদ্ভাবন টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনার নতুন রূপান্তর ‘পলিনেট হাউস’ এক গবেষণার ফসল।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সামাল দিয়ে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, রোগ বালাইয়ের আক্রমণ প্রতিরোধ, বীজতলার মাণ নিয়ন্ত্রণ এবং অসময়ের সবজি চাষসহ আধুনিক কৃষি কাজের জন্য ‘পলিনেট হাউজের’ কোনো জুড়ি নেই। গ্রিনহাউস’র আদলে দেশীয় কৃষি ব্যবস্থাপনায় নতুন সংযোজন এই ‘পলিনেট হাউস’।
এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে খুব সহজেই। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোনো বেগ পেতে হবে না। এই ‘পলিনেট হাউস’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র তাপদাহ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে শাক-সবজি এবং ফলমূলসহ সব ধরনের কৃষি উৎপাদন।
তাই অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ায় পলিনেট হাউসে উৎপাদিত ফসলের দিকেই এখন ঝোঁক বেশি কৃষকদের।
তবে এখনও সবখানে নেই ‘পলিনেট হাউস’। পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে আপাতত সরকারি উদ্যোগে দেশের সবগুলো বিভাগে একটি দুইটি করে পলিনেট হাউস নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। তা দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছেন অন্য কৃষকরা। দেশের শস্য ভান্ডার খ্যাত রাজশাহী বিভাগের এমন ২১টি ‘পলিনেট হাউস’ রয়েছে। এর মধ্যে একটি রয়েছে পবার খড়খড়িতে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়িতে গিয়ে দেখা যায় ‘কৃষক বন্ধন বিসমিল্লাহ্ নার্সারির স্বত্বাধিকারী শামসুল আলম কাদুর ২৫ শতক জমিতে কৃষি বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ সরকারি সহযোগিতায় পলিনেট হাউস করে দেওয়া হয়েছে। এতে উন্নতমানের পলি ওয়াল পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর পলি পেপার দিয়ে তিনটি শেডে এই পলিনেট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এর স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে প্রায় ২০ বছর।
এরপর রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমবার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পুরো খরচ দেওয়া হয়েছে। তবে এই টাকা শোধ দিতে হবে না। তবে এর জন্য শামসুল আলমকে একটি শর্ত দিয়েছে কৃষি বিভাগ। শর্তটি হচ্ছে- এখানে উৎপাদিত বীজ, শাক-সবজি ও ফলমূল স্থানীয়ভাবে সবার কাছে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে হবে। আর এ জন্য রশিদ বই রাখতে হবে।
এখানে শীতকালীন টমেটো, ফুলকপি ও কাঁটা বেগুন এবং চায়না বেগুনের বীজ বুনেছেন। আপাতত তিনি বীজ থেকে চারা উৎপাদন করছেন। এরপর অন্যান্য ফসল চাষের ব্যাপারেও ভাববেন। তবে পলিনেট হাউসের মধ্যে এই দুই মাসের মধ্যেই তিনি উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন। আশপাশের কৃষকরা এখনই পলিনেট হাউসের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন।
এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পলিনেট হাউসে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন- ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রঙিন (হলুদ) তরমুজ, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস ও অন্যান্য অসময়ের সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এছাড়াও গ্রীষ্মকালেও ফলবে শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে টমেটো, ফুলকপি, বেগুন, গাজর ইত্যাদি ফসল রয়েছে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, তেমনি অনেকেই আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে। উপরে উন্নতমানের পলিথিনের আচ্ছাদন থাকে। তাই এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায়।
এজন্য অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। আর এই পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছর সবজি চাষ করতে পারবেন। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সব ধরনের সবজি চাষ করে কৃষক আর্থিক ভাবে সফলতা পাবেন। কৃষি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরমর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, অসময়ে সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউস দেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নতুনভাবে সংযোজন হতে যাচ্ছে। এটি তৃণমূল কৃষকের স্বপ্ন ছুঁয়ে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, পলিনেট হাউসে ফসলের উৎপাদন ২০ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি পোকামাকড়ের আক্রমণও ৭০ শতাংশের কম। প্রাথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এতে উৎপাদন খরচ অত্যন্ত কম হবে। আর নিরাপদ ফসল উৎপাদন সহজ হবে। পলিনেটে সুস্থ সবল চারা উৎপাদন করা যাবে এবং উচ্চমূল্যের ফসলও উৎপাদন করে অধিক লাভবান হতে পারবেন সাধারণ কৃষক।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মোজদার হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী জেলায় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পবায় পলিনেট হাউস স্থাপন করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছরই সব ধরনের সবজি চাষ করতে পারবেন। আগ্রহীদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.