জয়পুরহাটে সিন্ডিকেটের থাবা” ৪৯ টাকার মুরগির বাচ্চা ৭৫ টাকায় বিক্রি

জয়পুরহাট প্রতিনিধি: হাত বদলেই বাড়ছে সোনালি আর ব্রয়লার মুরগির দাম। নেপথ্যে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।জয়পুরহাটের খামারিদের দাবি, উৎপাদন খরচের চেয়ে লাভ কম। তবে মাঠের চিত্র একদমই আলাদা।
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ইকরগাড়া গ্রামের খামারি এরফান আলী।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এ পেশায় জড়িত। তার উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে।কমেছে লাভের পরিমাণ। তিনি জানান, প্রতি কেজি ব্রয়লার উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১৬০ টাকা। আবার এ ব্রয়লারই বাকিতে মালামাল কিনে উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৭০ টাকার ওপরে।
অন্যদিকে ক্ষেতলাল উপজেলার সোনালি মুরগির সফল খামারি আসলাম হোসেন জানান, প্রতি কেজি সোনালি মুরগির উৎপাদন খরচ ২৫০-২৫৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে। কারণ, সোনালি মুরগির খাদ্য ও ওষুধ দুটিতেই খরচ বেশি।
একই দাবি জেলার অন্যান্য খামারিদেরও। তারা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির একেকটি বাচ্চার দাম আগে যেখানে ৫০-৫৫ টাকা ছিল, এখন সেই বাচ্চা ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আবার সোনালি মুরগির বাচ্চা জাত ভেদে দাম ছিল ১২ থেকে ১৬ টাকা টাকা পিস, এখন সেটি ২৮ থেকে ৩৬ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া দুই হাজার ৭০০ টাকার খাদ্যের বস্তা এখন সাড়ে তিন হাজার হয়ে গেছে। তাদের মতে, নানাভাবে এ ব্যবসাটা এখন সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে।
খামার ছেড়ে এবার আসা যাক বাজারে। জয়পুরহাট জেলায় খুচরা পর্যায়ে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকা এবং ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীদের দাবি, হাত বদল হলেই বাড়ছে দাম। নেপথ্যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে।
বটতলী বাজারের মুরগির খুচরা ব্যবসায়ী মাসুম মুন্সী, ফিরোজ হোসেন ও জয়নাল বিটিসি নিউজকে জানান, ব্রয়লার মুরগি খামারিসহ তিন হাত বদল হয়। আর সোনালি মুরগি খামারিসহ চার হাত বদল হয়। যে কারণে ভোক্তাদের ঘাড়েই বেশি মূল্য পড়ে যায়। তবে এটি রোধে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থামাতে হবে।
এদিকে খাদ্য ও ওষুধের দাম বাড়ার বিষয়ে স্থানীয় ফিড মালিকরা বলছেন, এ শিল্পের সঙ্গে ঢাকার কয়েকটি কর্পোরেট কোম্পানি জড়িত। তারা বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও ওষুধ সরবরাহ করে থাকে, তারাই বড় সিন্ডিকেট। এ শিল্পের সঙ্গে আরও বেশি কোম্পানিকে সংযুক্ত হতে হবে। তাহলে হাতে গোনা ওই কয়েকটি কোম্পানি একচেটিয়া ব্যবসা করতে পারবে না।
এ বিষয়ে জয়পুরহাটের পল্লী ফিড মিলের হিসাব রক্ষক গৌতম উঁড়াও জানান, ঢাকাস্থ কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আমরা কাঁচামাল ও ওষুধ কিনে থাকি। তারা যখন যে দাম নির্ধারণ করে, সে দামেই আমরা কিনতে বাধ্য হচ্ছি। যে কারণে আমাদেরও বাধ্য হয়ে বস্তা প্রতি খাদ্যের দাম কিছুটা বাড়াতে হয়।
শক্তিশালী এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. রাশেদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, এ জেলায় সোনালি মুরগির খামার বেশি। তবে ব্রয়লার মুরগিও ব্যাপক হারে লালন পালন করে থাকেন খামারিরা। সম্প্রতি রমজানকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন কোম্পানি মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে বাজার কিছুটা অস্থিতিশীল যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এবং কিছু মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজি রয়েছে। এ কারণে সরকার যে প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম ৪৯ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই বাচ্চার দাম ৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠে গেছে। এ জন্য স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ জয়পুরহাটসহ সারা দেশেই তদারকি জোরদার করেছে। বিশেষ করে মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের তথ্যমতে, এ জেলায় আগে ছোট বড় মিলিয়ে ১০ হাজার মুরগির খামার থাকলেও নানা কারণে এ সংখ্যা বর্তমানে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া জেলায় ১১টি ফিড মিল ও ৫০টি বাচ্চা ফুটানোর হ্যাচারি রয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর জয়পুরহাট প্রতিনিধি নিরেন দাস। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.