জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকদ্রব্যের ব্যবহার কমাতে কর বাড়ানো জরুরী

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও তামাকজনিত আর্থিক ক্ষতি রোধের অন্যতম প্রধান উপায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনা। কিন্তু তামাকদ্রব্যের সহজলভ্যতা এক্ষেত্রে বড়ো একটি বাধা। তাই তামাকের ব্যবহার কমাতে এর মূল্য বাড়িয়ে সহজলভ্যতা কমানোর বিকল্প নেই।
আজ বুধবার রাজধানীর ফারস হোটেলে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টারস ফোরামের সাথে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণ: গণমাধ্যমের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাবো ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আলোচনা সভাটি আয়োজন করে।
সভায় বক্তারা বলেন, নিম্নস্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি করা হলে স্বল্প আয়ের মানুষ ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত হবে। দাম বাড়লে কিশোর-তরুণরা ধূমপান ও তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। তাছাড়া করা বাড়ানো হলে সরকারের রাজস্ব আয় উলে­খযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
সভায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ক্লিনিকাল রেজিস্ট্রার (রিসার্চ) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহবুবুস সোবহান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, টোব্যাকো অ্যাটলাস অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।
আর ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতার ক্ষতি হয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তামাকদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে তামাকের ব্যবহার হ্রাস করার মাধ্যমে এই অকালমৃত্যু ও আর্থিক ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মূল প্রবন্ধে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সিগারেটের ক্ষেত্রে সকল ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করার প্রস্তাব করা হয়। সেখানে নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার দাবি জানানো হয়।
পাশাপাশি উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা ম‚ল্য ১১০ টাকা নির্ধারণ করে ৭১.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক করা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার কথা বলা হয়।
এছাড়া মধ্যমেয়াদে (২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬) সিগারেটের ব্র্যান্ডসমূহের মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়া হয়।
মাহবুবুস সোবহান আরো বলেন, প্রস্তাবিত কর কাঠামো বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১১ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে এবং ৮ লক্ষাধিক তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে; দীর্ঘমেয়াদে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লাখ তরুণের অকাল মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হবে।
সভায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরামর্শক শরফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাকদ্রব্যের সহজলভ্যতা হ্রাস করতে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে দাম বৃদ্ধি করতে হবে। সেই সাথে বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও ধোঁয়াবিহীন তামাকের খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টারস ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বি। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন তারা।
সভায় হেলথ রিপোর্টারস ফোরামের সদস্যরা ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজর আতাউর রহমান মাসুদ ও কমিউনিকেশন অফিসার সরকার শামস বিন শরিফ প্রমুখ।
সংবাদ প্রেরক মাহামুদ সেতু, মিডিয়া ম্যাজোর, অ্যান্টিটোব্যাকো প্রোগ্রাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.