জনগণকে রক্ষা নয়, উনাকে শাস্তি দেওয়াই সরকারের মূল লক্ষ্য : নজরুল ইসলাম

ঢাকা প্রতিনিধি: জনগণকে রক্ষা নয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে শাস্তি দেওয়াই সরকারের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে এক মানববন্ধনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের অনেক মানুষ, সম্পদ ও জনপদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে -এই নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। দেশে যখন এই চরম সঙ্কট, যখন উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে, পত্রিকায় দেখলাম সেই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে যিনি বসে আছেন। তাকে (প্রধানমন্ত্রী) আমরা বলতে শুনলাম খারাপ একটি শব্দ ব্যবহার করে, তারেককে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। দেশ যখন দুর্যোগে, তখন দেশের মানুষকে বাঁচানো প্রধান কাজ না। জনগণের সম্পদ রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ না। তাদের কাছে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা।
নজরুল ইসলাম আরো বলেন, কারণ জিয়াউর রহমানকে মারা হয়ে গেছে। আরাফাত রহমান কোকো বিদেশে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। জিয়া পরিবারের আছেন শুধুমাত্র তারেক রহমান। জিয়া পরিবারকে এতোই অপছন্দ যে তাকে দেশে এনে শাস্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, কী অপরাধ তারেক রহমানের। একজন বিচারক তাকে একটি মামলায় খালাস দিয়েছিলেন। ওই বিচারক পরে দেশে থাকতে পারেননি। এসকে সিনহার মতো তাকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। উচ্চআদালতে নিয়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি মামলার এজারসহ কোথাও তারেক রহমানের নামই ছিল না। একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কমকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ, তিনি তার এলাকায় নৌকা মার্কার ব্যানার লাগিয়ে প্রচার করছিলেন। তাকে সেখান থেকে এনে উচ্চতর পদে নিযুক্ত দিয়ে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হল। এই কাহার আকন্দ মুফতি হান্নানকে একশ দিনের বেশি রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করে তাকে দিয়ে তারেক রহমানের নাম বলানো হলো। সেই মামলায় বিদেশে থাকা অবস্থায় সাজা দেওয়া হলো। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি। মুফতি হান্নান ম্যাজিস্টেটের কাছে ওয়ান সিক্সটি ফোরে বলেছিলেন তাকে জোর করে এটা কারানো হয়েছে। আবার এই মামলার রায়ের আগেই কেন এত গুরুত্বপূর্ণ আসামিকে অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর করা হলো?
নজরুল ইসলাম খান বলেন, তারেক রহমানের ওপর মূল রাগের কারণ হচ্ছে, তারেক রহমান আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনকে বেগমান করেছেন, জোরদার করেছেন। দেশের ইতিহাসে তারেক রহমান দেশের ডান, বাম, সমাতান্ত্রিক, ইসলামপন্থি সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রের পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। দেশের মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটও দেননি।
তিনি বলেন, এজন্য ঘূর্ণিঝড়, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, টাকার অবমূল্যায়ন, দুর্নীতি, অনাচার, মানবাধিকার হরণ, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকলুট, রাষ্ট্রীয় দেনা বৃদ্ধি, সাবেক সেনা ও পুলিশ প্রধান আন্তর্জাতিক স্যাংশনের মুখে পড়ার পরেও সেগুলো কোনোটাই মূল কাজ নয়। মূল কাজ তারেক রহমানকে এনে শাস্তি দেওয়া।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বাকশালের বিরুদ্ধে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এই সরকার যে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, পুণরায় তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব। আমি বলতে চাই তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে না। তিনি নিজেই আসবেন। তিনি আসবেন বীরের ভেসে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি এবং ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং দায়ীদের গ্রেফতার দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় এতে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো, নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনারা দেশের অর্থনীতি একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যত ঋণ নিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ সুদ হয়েছে। ওই সুদ পরিশোধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আপনার সরকারের পাপের সুদ সহ আপনার যে বিচার হবে ওই বিচারের জন্য আপনি প্রস্তুত থাকেন। তারপরে আপনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কথা বলবেন। আপনার ছাত্রলীগ ডাকাতি করে আপনার ছাত্রলীগ নারীর শ্লীলতাহানি করে আপনার যুবলীগ টেন্ডারবাজি করতে নিজের ছেলেদেরকে এই ১৬-১৭ বছরে প্রায় ৫০ জন লোককে হত্যা করেছে। এই পাপগুলোর জন্য কী এদেশের আইনে বিচার হবে না?
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, যাদেরকে আপনি এমপি বানিয়েছেন তারাই তো টাকাগুলো পাচার করেছে তাদেরই প্রতিপক্ষ কলকাতায় কয়েক টুকরা করে কোন খালে বিলে ফেলেছে এখন খুঁজে পাচ্ছেন না। এরা এমপি হয় কী করে?এর দায় তো আপনার প্রধানমন্ত্রী। আপনি মাফিয়া,আপনি ডাকাত আপনি খুনিদেরকে এমপি বানিয়েছেন। এর দায় কী আপনার ওপর নেই?এই ভয়ংকর পাপগুলো কী এমনি চলে যাবে? এমনি পার পেয়ে যাবেন?
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মোমাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.