ছবিতে গল্প আঁকতেন নারায়ণ দেবনাথ

বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি: শৈশব হারিয়ে গেল বাঙালির। বাংলা হারালো ৯৭ বছরের এক সরল শিশুমনকে। চলে গেলেন ছেলেবেলার একান্ত সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথ, যিনি ছবিতে গল্প আঁকতেন। একই সঙ্গে শিল্পী, সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট। সামাজিক মাধ্যমের যুগেও যাঁর সৃষ্টি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ৯৭ বছর বয়সেও তাঁর খেলার সাথী বলতে শিশুরাই। শিশুদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাই ‘বাঁটুল দি গ্রেট’ কিংবা ‘হাঁদা- ভোঁদা’ অথবা ‘নন্টে-ফন্টে’ সৃষ্টির প্রেরণা। কমিকস দুনিয়ার সেই  যুগান্তকারী শিশুসাহিত্যিক নারায়ণবাবু আজ স্মৃতির জগতে।
বার্দ্ধক্যজনিত রোগভোগের পরে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকালেই কলকাতার মিন্টো পার্কের কাছে এক বেসরকারি হাসপাতালে নেমে আসে তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্ত। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে হাসপাতালের শয্যাতেই তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় ভারত সরকারের দেওয়া ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান। এর আগে ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে দিয়েছিল ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান। পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, ‘সাহিত্য অ্যাকাডেমি’ পুরস্কারও। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানিত করেছিল ‘ডি লিট’ উপাধিতেও।
এত সম্মানেও তিনি হারিয়ে ফেলেননি বিনয় কিংবা রসবোধকে। হাওড়া-শিবপুরে রাজ্য সচিবালয় নবান্নের অদূরে বাজারের এক প্রান্তে নিজের দোতলা বাড়ির একটি ঘরে দিনরাত ডুবে থাকতেন নীরব শিল্প-সাহিত্য সাধনায়। প্রচারের আলো এড়িয়ে চলতে ভালোবাসতেন। কিন্তু বাজার করতে দারুন ভালোবাসতেন। সৃজনশীলতার চর্চার মাঝেই সকালে অন্তত একবার বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়া চাই-ই।
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘কনসাস এফর্ট নট টু স্মাইল’। এই নীতি এবং আদর্শকে আঁকড়ে ধরে যাঁরা বেঁচে থাকতে চান, তাঁরাও কিন্তু কোনও না কোনও সময়ে হার মেনেছেন নারায়ণ দেবনাথের ‘সেন্স অফ হিউমার’এর কাছে। বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা কিংবা নন্টে-ফন্টের কান্ডকারখানা দেখে একান্তে ফিক করে হেসে ফেলেছেন গোমড়ামুখো বুড়োখোকারাও। এখানেই কালজয়ী তিনি। ১৯৬৫ তে তাঁর তুলিকলমে জন্ম নিয়েছিল বাঁটুল। অর্ধশতাব্দী পার করা সেই কার্টুন চরিত্র সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, ‘আমাকে কেউ চেনে না, চেনে বাঁটুলকে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধের আবহে শত্রুপক্ষের জঙ্গিবিমান কিংবা প্যাটন ট্যাঙ্ককে অনায়াসে ধ্বংস করেছে হিরো বাঁটুল। করোনা যুদ্ধেও এই কমিকস চরিত্রকে নিখুঁতভাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিলেন স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ। আসলে কমিকসের সীমিত পরিসরে শিশুমনের চাহিদা মেটানোর চ্যালেঞ্জে অর্ধশতকেরও বেশি জয়ের অধ্যায় অনায়াসেই ধরে রাখতে পেরেছিলেন নারায়ণবাবু। তাই দুই বাংলারই তিনি ছিলেন মনের মানুষ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.