BTC News | বিটিসি নিউজ

আজ- বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আজ- ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চেয়ারম্যানকেও গুনছেন না রাকাব এমডি ওয়াহিদা বেগম

চেয়ারম্যানকেও গুনছেন না রাকাব এমডি ওয়াহিদা বেগম

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত অর্থবছরে ১৩২ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। অভিযোগ রয়েছে, উত্তরের এই বিশেষায়িত ব্যাংকটির লোকসান কেবল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াহিদা বেগমের অদক্ষতা, অনিয়ম ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেই।

পরিচালনা পর্ষদকে পাশ কাটিয়ে নিজের খেয়াল খুশিমতো ব্যাংক চালানোর অভিযোগ রয়েছে এমডির বিরুদ্ধে। আর তাতে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে রাকাবে। বাড়ছে বিভেদ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা।

এই ঘটনায় এমডিকে কৈফিয়ত তলব করেছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান।

জানা যায়, ২০২৫ সালের ৯ মার্চ রাকাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পান আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত ওয়াহিদা বেগম। যোগদানের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও রাকাবের উন্নয়নে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি তিনি। উল্টো দায়িত্ব নেওয়ার পর চেয়ারম্যান-পরিচালকদের পাশ কাটিয়ে খেয়াল খুশিমতো ব্যাংক চালাতে শুরু করেন। ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের পুনর্বাসন করে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এতে ব্যাংকজুড়ে চরম অসন্তোষ ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এমডির এই কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ পরিচালনা পর্ষদ। গত ৩ ও ১২ নভেম্বর দুই দফা এমডিকে কৈফিয়ত তলব করেছেন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলী। কিন্তু চেয়ারম্যানের সেই কৈফিয়তের জবাবই দেননি এমডি।

অভিযোগ উঠেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ আউট সোর্সিং কোম্পানির সঙ্গে গোপন আঁতাত করে ৭২১ জন নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়কদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় ও কমিশনের ১০ কোটি ২৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এমডি।

জানা যায়, আউট সোর্সিং কোম্পানির সঙ্গে জনবল সরবরাহের চুক্তিটি ২০২৩ সালে ১৬ এপ্রিল ৫৬১তম সভায় নবায়ন করে পরিচালনা পর্ষদ।

চলতি বছরের ৩১ জুলাই সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আউট সোর্সিং কোম্পানি নিয়োগ করার কথা। কিন্তু তা না করে এমডি বিধি-বহির্ভূতভাবে এই খাতে প্রায় ১০ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। সর্বশেষ পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে গত ২০ নভেম্বর তিনি সীমিত টেন্ডারের উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্তির নোটিশ জারি করেন। এই ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের নেওয়া সিদ্ধান্ত এমডি বাস্তবায়ন করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন খোদ চেয়ারম্যান।

অভিযোগ রয়েছে, এমডি ব্যাংকের স্পর্শকাতর ও অতিগুরুত্বপূর্ণ ডাটা সেন্টারের টেন্ডার সংক্রান্ত যাবতীয় বিল আটকে দিয়েছেন। এই ঘটনায় চরম ঝুঁকিতে পড়েছে ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা। এনিয়ে বার বার সতর্ক করার পরও আমলে নিচ্ছেন না এমডি। চেয়ারম্যানের অভিযোগ, এমডির এই আচরণ চরম রহস্যজনক। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তিনি বৈধ বিল পরিশোধে কালক্ষেপণ করছেন।

এদিকে চলতি বছরের মে মাসে চুক্তির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে প্যানেল আইনজীবীদের। নতুন করে আইনজীবী নিয়োগ না দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ আইনজীবী প্যানেল দিয়েই কোর্টে ব্যাংকের মামলা চালাচ্ছেন এমডি। দিচ্ছেন মামলা পরিচালনার বিলও। যা পুরোপুরি বেআইনি ও অবৈধ বলে অভিযোগ এনেছেন চেয়ারম্যান। এতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন চেয়ারম্যান। কিন্তু তা কানে তুলছেন না এমডি।

এমডির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, চলতি বছরের জুন ভিত্তিক পদোন্নতি আটকে দিয়েছেন তিনি। এতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দ্রুতই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। কিন্তু তা আমলে নেননি এমডি। উল্টো চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে ২০ জনকে প্রধান কার্যালয় থেকে রংপুর বিভাগে বদলি করেন। এমপির একতরফা ও অযৌক্তিক এই সিদ্ধান্তে ব্যাংকজুড়ে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে পতিত স্বৈরাচার ও খুনি সরকারের আমলে যারা রাকাবে জুলুম-নির্যাতন ও বৈষম্য সৃষ্টি করেছিলেন তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতা দেন এমডি। তাদের প্রধান কার্যালয়ে সংগঠিত করার অভিযোগ আনেন চেয়ারম্যান।

অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের পদ বাঁচাতে উচ্চপদস্থ কতিপয় কর্মকর্তাদের সরকারি সুযোগ-সুবিধার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত আবাসন সুবিধা দেন। আটকে দেন ইসলামি ব্যাংকিং বাস্তবায়ন। এমডির পছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নীতি ভেঙে দু’দিনের পরিবর্তে সাপ্তাহিক ছুটি ৩ দিন ভোগ করছেন।

অভিযোগ বিষয়ে রাকাব এমডি ওয়াহিদা বেগম বলেন, আমাকে চেয়ারম্যান স্যার একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছে। আমি সব চিঠিরই জবাব তাকে দিয়েছি। পাশাপাশি সব টেন্ডারও দেওয়া হয়েছে। আমি এটা নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। আমি সব কিছুরই উত্তর দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে এটি সঠিক নয়। এখানে যোগদানের পর আগে যা পেয়েছি আমি সেই হিসাবেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে নতুন কিছুতো হয়নি। পদোন্নতি সবাই পেয়ে যাচ্ছে, নিয়ম এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।

রাকাব চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি কিছু অনিয়ম দেখেই তাকে শোকজ বা চিঠি দিয়েছি। এরপরই তিনি কিছু কাজ করেছেন। কিছু কাজের ঘাটতি আছে। সেগুলো হয়ত কোনোটি এগিয়ে গেছে, কোনোটি পিছিয়ে আছে। এগুলো অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

প্রসঙ্গত, পদোন্নতি পেয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওয়াহিদা বেগম রাকাবে বদলি হয়ে আসেন। তার আগে তিনি অগ্রণী ব্যাংক পিএলসিতে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ ছিল। এনিয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও হয়। কিন্তু আওয়ামী ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখান।

এই ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি ওয়াহিদা বেগমসহ অগ্রণী ব্যাংকের ৪ কর্মকর্তাকে আদালত আদেশ অমান্য করার দায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু সেই তথ্য গোপন করে কৌশলে রাকাবে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন ওয়াহিদা বেগম। রাকাবে তার এই নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ নভেম্বর উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। এ নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে পরে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি জি, এম হাসান-ই-সালাম (বাবুল) রাজশাহী। #

এইরকম আরও খবর

সর্বশেষ খবর

ব্রেকিং নিউজ
জোনাকি দেখতে কেমন? জোনাকি কি সত্যিই জোনাকির মাংস খায়? ২৫ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশের আরেকটি নতুন ইতিহাস : মিলন আখাউড়ায় আ. লীগ-যুবলীগের ৫ নেতা গ্রেফতার মস্কোয় যেমন কাটছে সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের জীবন বিপদে আমার দরজা সবার জন্য খোলা থাকে : পরীমণি ‘খালেদা জিয়া ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ’ তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিএনপির নতুন কর্মসূচি উজিরপুরে ব্যাপক আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ৬০০ প্যাকেট ভারতীয় বিড়ি জব্দ পঞ্চগড়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণা হোমিও চিকিৎসকের